নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারা অন্তরীণ রেখে বাংলাদেশে কোনো বর্ষ পালন সফল হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার সকাল ১১টায় ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী শেখ রবিউল আলমসহ নেতাকর্মীদের নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ এবং প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন মির্জা ফখরুল। এরপর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বেগম খালেদা জিয়া যখন কারাগারে তখন মুজিব জন্মশতবর্ষ কতটুকু সফল হবে বলে মনে করেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা তো শুধু সফলেরই প্রশ্ন না। এটা একটা মুকারি, প্রহসন। কারণ বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। ১৯৭১ সালেও যিনি স্বাধীনতার জন্যই কারাগারে ছিলেন পাকিস্তান বাহিনীর হাতে। তাকে গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ নয় বছর সংগ্রাম করতে হয়েছে, লড়াই করতে হয়েছে। পরবর্তীকালেও গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য তিনি এখনো জেলে আছেন, কারাগারে আছেন। তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে আটক রেখে কোনো বর্ষই এখানে সফল হবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে সংগ্রাম, যে যুদ্ধ এর মূল চেতনাটা ছিল গণতন্ত্রের সংগ্রাম, গণতন্ত্রের যুদ্ধ। এটাকে কেন্দ্র করেই দীর্ঘকাল ধরে আমাদের স্বাধীনতা দাবি উঠেছে, স্বাধিকারের আন্দোলন হয়েছে, সংগ্রাম হয়েছে। তারই পরিণতি হিসেবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একাত্তরের ২৬ মার্চ যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এবং দেশ স্বাধীন হয়েছে। শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি বা একটি গোষ্ঠি বা একটি দল কিন্তু এই স্বাধীনতার দাবিদার হতে পারে না।’
দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে ‘মুজিব জন্মশত বর্ষ’ উপলক্ষে ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন যাবত দেশের ইসলামী দলগুলো বিক্ষোভ করছে। এই বিক্ষোভকে আপনারা কীভাবে দেখছেন প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো আমাদের বক্তব্য আগে বলেছি। খুব পরিষ্কার করে বলেছি যে, বর্তমান বাংলাদেশে যে অবস্থা বিশেষ করে ভারতের এনআরসি পরে এরই মধ্যে যে দাঙ্গা হয়ে গেল তার যে প্রভাব পড়েছে, সেই প্রভাবে উনার (নরেন্দ্র মোদি) এখানে আসাটা কতটুকু সমীচীন, কতটুকু শোভনীয় এটা তারাই বিচার করবেন।’
আগামী ২১ মার্চ ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, বিএনপি নির্বাচনে সিরিয়াস নয়, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা অংশ নিচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো কত কথাই বলবে। জনগণের সমর্থন ছাড়া, ম্যান্ডেটবিহীন অবস্থায় শুধু অস্ত্র দিয়ে ক্ষমতা দখল করে বলে আছে। স্বাভাবিকভাবে তারা এই ধরনের কথাবার্তা বলবে যাতে করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু সেটাতে তারা সক্ষম হয়নি। আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি গণতান্ত্রিক যে রীতি রয়েছে যে নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতার পরিবর্তন, আমরা সেটাতে বিশ্বাস করি বলেই, আমরা একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি বলেই এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। আমরা আগেও বলেছি, এই নির্বাচনটা আমরা গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবার এবং গণতন্ত্রের মাতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবার একটা আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই নির্বাচনে অত্যন্ত সিরিয়াস। প্রত্যেকটি নির্বাচনে দেখেছেন যে, আমরা সিরিয়াসলি অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই সরকার যারা বেসিক্যালি জনগণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই, জনগন তাদেরকে সমর্থন করে না, জোর করে ভয় দেখিয়ে, ভীতি দেখিয়ে, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা এই নির্বাচনটাকে তারা তাদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। সেটার প্রতিবাদ করার জন্য, তাকে প্রতিরোধ করার জন্য আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। সুতরাং তাদের যে যুক্তি সেই যুক্তি কোনোদিনই গ্রহনযোগ্য না।’
ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী শেখ রবিউল আলম রবি নবীন প্রার্থী। তার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কে কতটুকু আশাবাদী- জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী একজন সংগ্রামী, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামী একজন নেতা এবং ধানমন্ডি বিএনপির সভাপতি। ছাত্র রাজনীতি করেছেন, দীর্ঘকাল রাজনীতি করছেন এবং এলাকায় তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় মানুষ। আমি বিশ্বাস করি সে অত্যন্ত মেধাবী ছেলে, তার মেধা দিয়ে সে কনট্রিবিউট করতে পারবে। সে অবশ্যই তার এই যোগ্যতা প্রমাণ করে জনগনের ভোটে নির্বাচিত হতে পারবে ইনশাল্লাহ।’
এ সময়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সহসভাপতি নবী উল্লাহ নবী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Comment here