নিজস্ব প্রতিবেদক ; কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে নভেল করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে অবরুদ্ধ নারায়ণগঞ্জ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় প্রায় পাঁচশ নারী-পুরুষকে ঠেকিয়ে দিয়েছে পুলিশ; জব্দ করা হয়েছে সাতটি পিকআপ, একটি ট্রাক ও একটি নৌযান।
ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার টাগারপাড়, মাউরাপট্টি, সাইনবোর্ড ও ধর্মগঞ্জ এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের আটকে দেয় এবং তাদের বহনকারী যানগুলো জব্দ করে।
বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পরস্পর থেকে দূরে থাকাই এখন পর্যন্ত সেরা উপায় বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। তাই অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশ সরকারও প্রায় সবকিছু বন্ধ করে সবাইকে ঘরে থাকতে বলেছে।
অনেক জেলা থেকে বের হওয়া এবং ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জও তেমনি একটি জেলা। কিন্তু সবকিছু বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষজন নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে বাড়ি যেতে চেষ্টা করছে। এতে ভাইরাসটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যেই নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া লোকজনের সংস্পর্শে বহু জেলায় ভাইরাসটি ছড়িয়েছে।
ওসি আসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌপুলিশের টহল দল ৭০ থেকে ৭২ জন যাত্রী বহনকারী একটি বাল্কহেড আটক করে। বাল্কহেডটি ফতুল্লা থেকে যাত্রী নিয়ে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হলে ধাওয়া করে তাদের আটক করা হয়। পরে তাদের বাসায় ফেরত পাঠানো হয়।’
এছাড়া রাত দেড়টার দিকে সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ৬০ জন যাত্রীর একটি ট্রাক আটক করা হয় ফতুল্লা থানার পরিদর্শক তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে। এই যাত্রীরা পঞ্চবটি থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। তাদের ফিরিয়ে দিয়ে ট্রাকটি জব্দ করা হয় বলে জানান ওসি আসলাম।
ওসি বলেন, ‘এদিকে রাত পৌনে ২টার দিকে ফতুল্লার টাগারপাড় এলাকা থেকে তিনটি পিকআপভ্যানে দেড় শতাধিক যাত্রী কিশোরগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের পিকআপ থেকে নামিয়ে যার যার বাসায় ফেরত পাঠায়। জব্দ করা হয় তিনটি পিকআপ।’
প্রায় একই সময় জেলা শহরের মাউরাপট্টি এলাকা থেকে চারটি পিকআপে দুই শতাধিক যাত্রী কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হলে ফতুল্লা থানার এসআই মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল গিয়ে তাদের আটক করে। তাদের পিকআপ থেকে নামিয়ে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি চার পিকআপ জব্দ করা হয় বলে জানান ওসি।
ওসি বলেন, ‘আটক যাত্রীরা ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলে পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। কারখানা বন্ধ থাকায় তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া তারা আতঙ্কে ভুগছেন। এ কারণে তারা নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন।’
গত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। তাছাড়া আরও ১৬৯ জন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য রয়েছে। আইইডিসিআর থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলাকে অবরুদ্ধ ঘোষণা করে আইএসপিআর। নারায়ণগঞ্জ শহর ও সদর উপজেলা এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
Comment here