নির্বাচনে হঠাৎ উত্তেজনা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

নির্বাচনে হঠাৎ উত্তেজনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে প্রচার শুরুর পর থেকে পরিস্থিতি শান্তই ছিল। কিন্তু ভোটগ্রহণের ১০ দিন আগে গতকাল মঙ্গলবার গাবতলীতে প্রচারে গিয়ে দুদফা হামলার শিকার হন ঢাকা উত্তরে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল। এতে তিনিসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে নির্বাচনের মাঠে। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে এ নির্বাচনে প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

হামলার ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করে দারুসসালাম থানার ওসিকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। এতে তিনি বলেন, ঘটনার সময় পুলিশ সক্রিয় থাকলে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। নির্বাচন কমিশন বলেছে, হামলার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে ক্ষমতাসীনদের হিংস্রতা ততই বাড়ছে। তবে এ হামলা বিএনপির অন্তর্কোন্দলেই কিনা এমন সংশয় প্রকাশ করেছেন ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম। গতকাল বেরাইদে নির্বাচনী সমাবেশে আতিক বলেন, হামলার বিষয়ে এখনো শুনিনি। তারা নিজেরাই সংঘর্ষ বাধাতে পারেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি নির্বাচনের পরিবেশ ঘোলাটে করার জন্য একটি পক্ষ সক্রিয়। এটি সেই পক্ষেরই কারসাজি কিনা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্রথম থেকেই বিএনপির চেষ্টা হচ্ছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। সুতরাং নানা ধরনের ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যে প্রক্রিয়া, এটি সেই প্রক্রিয়ারই অংশ কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তাবিথের ওপর হামলার ঘটনায় দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেছেন, হামলা-ভয় উপেক্ষা করে ভোটের মাঠে থাকব।

হামলার পর তাবিথ আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় তাবিথ ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও যমুনা টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার সাইফুদ্দিন রবিন ও সাঈদ খান আহত হন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ হামলার ঘটনায় রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা ছড়াতে শুরু করেছে। সবার জন্য সমান সুযোগ না থাকলে এ ধরনের অস্থিরতা চলতে থাকবে। নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই বিষয়গুলো তীক্ষèভাবে দেখতে হবে। না হলে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হবে। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এ হামলার ঘটনায় নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত করেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গণসংযোগ শুরু হয় ১০ জানুয়ারি। জমজমাট এ প্রচার শুরু থেকেই উত্তাপ ছড়াচ্ছে। প্রতীক নিয়ে প্রচারের তৃতীয় দিন ১২ জানুয়ারি গাবতলীতেই তাবিথের ওপর হামলা হয়। একই দিন দক্ষিণের দুই মেয়রপ্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং ইশরাক হোসেনও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেন।

তাবিথের ওপর দুদফা হামলা ছাড়াও গতকাল বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা উত্তরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হুমায়ুন কবির আহমেদের প্রচারে পেছন থেকে হামলা হয়। এতে ৫-৬ জন আহত হন বলে জানিয়েছেন হুমায়ুন। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে উত্তরা, বাড্ডা, গোপীবাগ, শ্যামলীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর নেতৃত্বে হামলা

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বেলা ১১টার দিকে গাবতলী পর্বত সিনেমা হলের সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ আউয়াল। সেখান থেকে প্রচার মিছিল নিয়ে আনন্দনগরের তেলের মিল এলাকায় গেলে পেছন থেকে হঠাৎ করে ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে শতাধিক লোক ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা তাবিথকে কিলঘুষি মারতে শুরু করে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে বেষ্টনী তৈরি করেন। সেখানেও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালানো হয়। ইট নিক্ষেপ ও ঘুষিতে তাবিথ মুখ ও মাথায় আঘাত পান। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিব সরোয়ার মাসুমের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আক্রান্তরা। তবে মাসুম এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এ ঘটনার পর তাৎক্ষণিক সেখানে প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। এর পর বক্তব্য দেন তাবিথ। তার বক্তব্য শেষ না হতেই দ্বিতীয় দফায় হামলা হয়। একপর্যায়ে তাবিথ নিজেই নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘুরে দাঁড়ান। এ অবস্থায় পুলিশ বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে অবস্থান নেয়।

পরে তাবিথ আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনা পুলিশের সামনেই হয়েছে। পুলিশ নিজের চোখে দেখেছে এ হামলা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঠেলাগাড়ী প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মুজিব সরোয়ার মাসুম ও তার লোকেরা করেছে। আশা করি, পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। দারুসসালাম থানার ডিউটি অফিসার আবদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, তারা অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ হামলাকারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে হামলাকারীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে পেটাতে থাকে। তারা তাবিথের নেতাকর্মীদের বাজারপাড়া হয়ে হরিরামপুর পর্যন্ত ধাওয়া করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এর পর তাবিথ ১০ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী রোড দিয়ে কল্যাণপুর চলে যান।

কল্যাণপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কাপুরুষের মতো পেছন থেকে আমাকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে। আমি স্পষ্ট বলতে চাইÑ হামলা আমাদের দমাতে পারবে না। আমরা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার চালিয়ে যাব। বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এ অবস্থা থাকলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।

হামলার পর গোলারটেক, দিয়াবাড়ি, বর্ধনবাড়ি, বাঘবাড়ি, গাবতলী টার্মিনাল হয়ে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড, লেকভিউ, দক্ষিণ পাইকপাড়া, বটতলা, মধ্য পাইকপাড়া, লালওয়াল, নতুনবাজার, ডি টাইপ কলোনি, কল্যাণপুর হাউজিং এস্টেট, পোড়াবস্তি, শহীদ মিনার রোডে গণসংযোগ করেন তিনি।

ক্ষমতাসীনদের হিংস্রতা বাড়ছে : মির্জা ফখরুল

ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে ক্ষমতাসীনদের হিংস্রতা ততই বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলার পর এক বিবৃতিতে এ ঘটনাকে ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তাবিথ আউয়ালের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রচারে সন্ত্রাসীদের হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও কাপুরুষোচিত। ঢাকা সিটি নির্বাচনকে একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ী করতেই প্রতিদিন বিএনপির মেয়রপ্রার্থীর প্রচারে হামলা চালাচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও ভয়ভীতিমুক্ত করতে আমি আবারও নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছি।

Comment here