সিলেটে কলেজ শিক্ষক সাইফুর রহমান হত্যাকা-ের ঘটনায় খুনি হিসেবে স্বীকারোক্তি দেওয়া কথিত প্রেমিকা তাসনিম রুপা ও মোজাম্মিল হোসেনের সহযোগী অটোরিকশা চালককে খুঁজছে পুলিশ। হোটেলে হত্যার পর ওই অটোরিকশা চালকের সাহায্যেই সাইফুরের মরদেহ বাইরে নিয়ে ফেলা হয়। এদিকে আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে সাইফুর রহমানকে ধর্ষক বলে দাবি করেছেন রুপা।
রুপার দাবি, বাড়িতে লজিং থেকে শিক্ষকতার সুযোগে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক পাতেন সাইফুর। পরে জোরপূর্বক দৈহিক সম্পর্ক করে তা ভিডিও করে রাখেন। সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন যৌন নির্যাতন চালিয়ে যেতে থাকেন। ভুয়া কাবিন তৈরি করে বিভিন্ন হোটেলে তার সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করে রুপাকে। এক পর্যায়ে রুপার ছোট বোনের দিকেও নজর পড়ে তার। নগরীর মদনমোহন কলেজে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে শিক্ষকতা করতেন সাইফুর। একপর্যায়ে কলেজে একই বিভাগের শিক্ষার্থী রুপার সম্পর্ক গড়ে ওঠে মোজাম্মিল হোসেনের সঙ্গে। এতে সাইফুর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রুপা।
শনিবার এই পরিকল্পনা থেকেই স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে নগরীর মেহেরপুর আবাসিক হোটেলে ওঠেন তারা। সেখানে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রথমে অচেতন এবং পরে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে রুপা। পরে প্রেমিক মোজাম্মিল ও একজন অটোারিকশা চালকের সহযোগিতায় তার মরদেহ সেখান থেকে সরিয়ে দক্ষিণ সুরমায় ফেলে আসা হয়। তার স্বামী অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে বলে হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানায় রুপা।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা জানান, রুপা খুনের দায় স্বীকার করেছে। শিক্ষকের আড়ালে নিহত সাইফুর একজন ভয়ংকর ধর্ষক ছিল বলেও দাবি করেছে সে। তবে তার দাবির পক্ষে পুলিশের হাতে এখনো নকল কাবিন বা ছবি-ভিডিও কিছু আসেনি। অন্যদিকে সাইফুর মৃত জেনেও অটোরিকশা চালক তার লাশ সরাতে সহযোগিতা করার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা সেটা তদন্ত করছে পুলিশ।
গোয়াইনঘাট উপজেলার ফলতইল সগাম গ্রামের মো. ইউসুব আলীর ছেলে সাইফুর রহমান (২৯) সিলেট নগরীর টিলাগড়ে একটি মেসে থেকে নগরীর মদনমোহন কলেজ ও গোয়াইনঘাটের তোয়াকুল কলেজে শিক্ষকতা করতেন। গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে মেস থেকে বের হয়ে রাতে আর মেসে না ফিরলে পুলিশকে জানায় তার পরিবার। রবিবার সকালে দক্ষিণ সুরমার তেলিরাই এলাকায় তার লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয় লোকজন।
নিহত সাইফুরের গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশ পরিকল্পিত খুনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়। ময়নাতদন্তের পর রবিবার রাতেই তার জানাজা সম্পন্ন হয়। রবিবার রাতে নগরীর টিলাগড় থেকে ছাতক উপজেলার আলমপুর গ্রামের মোজাম্মিল হোসেন এবং খিদিরপুর গ্রামের বাড়ি থেকে নিশাত তাসনীম রুপাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত সোমবার দুপুরে মোজাম্মিল ও রুপা সিলেট মহানগর তৃতীয় আদালতের হাকিম সাইফুর রহমানের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে।
Comment here