নিজস্ব প্রতিবেদক : দুই সপ্তাহ ধরে বিয়ের পরিকল্পনা করছিল ৬ কিশোর কিশোরী। পরিকল্পনা অনুযায়ী পালিয়ে তারা চলে আসে চট্টগ্রামে। ইচ্ছা ছিল, বিয়ে করে নিজেদের গুছিয়ে নেবে। কিন্তু চট্টগ্রামে এসেও সুবিধা করতে পারেনি তারা। ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। এখন পরিবারের কাছে ফিরে যেতে হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্রী, পঞ্চম শ্রেণির একজন ও দুজন নবম ও একজন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রকে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর রেল স্টেশন এলাকা থেকে এ ছয় কিশোর-কিশোরীকে আটক করে পুলিশ। তাদের বরাত দিয়ে চিট্টগ্রাম পুলিশ জানিয়েছে, এক বান্ধবীর বাল্যবিবাহ ঠেকাতে গিয়ে নিজেরাই সম্পর্কে জড়ায় এই ছয়জন। পরে সবাই একত্রে ঢাকা থেকে পালিয়ে আসে। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) নোবেল চাকমা গণমাধ্যমে এসব তথ্য জানান।
নোবেল আরও জানান, রেল স্টেশনে চলাফেরা সন্দেহজনক মনে হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এ সময় তাদের দুই জন নিজেদের স্বামী-স্ত্রী, অন্যরা বন্ধু-বান্ধবী বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু কথাবার্তায় রহস্য থাকার কারণে তাদের সবাইকে থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কিশোর-কিশোরীরা তাদের আসল ঘটনা প্রকাশ করে। জানায়, বিয়ে করার জন্য তারা পালিয়ে চট্টগ্রাম এসেছে। পরে তাদের পরিবারের সঙ্গে থানা থেকে যোগযোগ করা হয়।
জানা গেছে, ছয় জনের মধ্যে পাঁচ জনের বাড়ি ধামরাই উপজেলার বড় কুশিরিয়া কাজিয়ারকুণ্ড গ্রামে। আর এক জনের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায়। তাদের মধ্যে একজন করোনাভাইরাস সংক্রমণে স্কুল ছুটি থাকায় কাজিয়ারকুণ্ডে খালার বাড়িতে থেকে টাইলস ফিটিং করার কাজ শিখছে। তিন কিশোরীর দুই জন ধামরাইয়ে স্থানীয় দুইটি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অন্যজন স্থানীয় একটি মহিলা মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। তিন কিশোরের দুই জন ধামরায়ের স্থানীয় দুইটি স্কুলে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এবং আরেক জন কুমিল্লার লাকসামে নিজ বাড়িতে একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ে। সবার বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাদের মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোরীর বিয়ে ঠিক করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। কিন্তু পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে তারা সবাই এক সাথে বাড়ি থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোর-কিশোরীরা জানায়, বিয়ে ঠেকিয়ে নিজেরা বিয়ে করার জন্য তারা গত দুই সপ্তাহ ধরে নিজেরা পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালে সবাই একযোগে বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় এবং সেখান থেকে বিকালের ট্রেনে করে রাতে চলে আসে চট্টগ্রামে। তাদের মধ্যে যে কিশোরের বাড়ি কুমিল্লার লাকসামে সে জানায়, আগেও সে চট্টগ্রামে এসেছে। তার এক পরিচিত ব্যক্তির নগরীর বন্দরটিলা এলাকায় দোকান আছে বলে সে জানে। সেই পরিচিত ব্যক্তির ভরসায় চট্টগ্রামে এসে থাকা এবং বিয়ের ব্যবস্থা করার বিষয়ে অন্যদের আশ্বস্ত করে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম এসে বন্দরটিলার ওই এলাকায় গিয়ে দোকানের সন্ধান পায়নি সে, এমনকি তার কোনো ফোন নম্বরও তার কাছে নেই। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তাদের কাছে ছিল মাত্র ছয় হাজার টাকা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসতেই তাদের বেশকিছু টাকা খরচ হয়ে যায়। রাতে অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরেও পরিচিত ব্যক্তির সন্ধান না পেয়ে অটো চালকের কাছ থেকে রাত যাপনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার সহায়তা চায়।
তারা আরও জানায়, ওই অটোচালক তার নিজের অটো ভাড়া বাবদ সাড়ে ৬০০ টাকা নিয়ে ফ্রি-পোর্ট এলাকায় একটি স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে এক নারীর মাধ্যমে রাতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় একটি বাসায়, যার জন্য ওই নারীকে তাদের দিতে হয়েছে ৭০০ টাকা ঘর ভাড়া। সকাল থেকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাড়ি ফিরে যেতে, সে জন্য তারা বাসের টিকিট করতে গিয়েছিল। কিন্তু টাকা সংকুলান না হওয়ায় রাতের ট্রেনে করে ঢাকায় ফিরতে রেল স্টেশনে গিয়েছিল। আর সেখান থেকে তাদের পুলিশ থানায় নিয়ে আসে। তবে তারা বিয়ের জন্য শাড়ি ও বাড়ি থেকে আর কিছু কসমেটিকস কিনেছিল। উদ্ধার করা শিক্ষার্থীদের ব্যাগ থেকে এসব উদ্ধার করা হয়।
সহকারী কমিশনার নোবেল বলেন, উদ্ধার হওয়া কিশোর-কিশোরীরা সবাই নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের দুই কিশোরীর মা প্রবাসী শ্রমিক। পারিবারিকভাবে অজ্ঞতা থাকায় তাদের একটি পরিবার বাল্য বিয়ে দেওয়ার আয়োজন করছিল। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় না হওয়ায় তারা পরিবার ছেড়ে পালিয়ে এসেছে। শনিবার সকালের মধ্যে ছয় কিশোর-কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রামে পৌঁছাবে। পরে তাদের হাতে তাদের সন্তানদের তুলে দেওয়া হবে।
Comment here