দুর্নীতি ও অর্থপাচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে দুর্ভিক্ষ ডেকে এনেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলেছেন, এই সরকার দেশের গণতন্ত্র হরণ করেছে, ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, বিরোধী দলের ওপর গুম, খুন, হামলা করছে, মামলা দিয়ে বন্দি করছে, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে। এই দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হলে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এ জন্য আমাদের সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে রাজপথে থাকতে হবে।
গতকাল শনিবার বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) বিভাগীয় গণসমাবেশে বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন।
গণসমাবেশ মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মানে দুটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়ন-উন্নয়ন করলেও আসল উন্নয়ন করে বিএনপি। বিএনপি সরকারের আমলে বরিশাল বিভাগ হয়েছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, বিকেএসপি হয়েছে। আরও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কোনো উন্নয়ন করেনি। তাদের উন্নয়ন হচ্ছে দুর্ভিক্ষ।
বেলা ১১টায় বিএনপির এই বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের পর জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীতের পর শুরু হয় নেতাদের বক্তব্য। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন আর কোনো বিবাদ নয়, ঝগড়াঝাঁটি নয়, জাতির প্রয়োজনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই আন্দোলন শুধু বিএনপির নয়, এই আন্দোলন
খালেদা জিয়ার নয়, এই আন্দোলন শুধু তারেক রহমানের জন্য নয়Ñ এই আন্দোলন সমস্ত জাতির, এই আন্দোলন আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘খুব পরিষ্কারভাবে বলছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আপনাকে (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে এবং সেই কমিশনের অধীনে ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সবাই মুক্তি চাই, এ দেশের মানুষ আর কোনো কথা শুনতে চায় না। ফয়সালা হবে কোথায়?Ñ রাজপথে।’
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের সমস্ত টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়েছে। বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সেই বিদ্যুৎ এখন আর নাই। বিদ্যুতে হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। একটা জায়গা নেই, যে জায়গায় তারা চুরি করে নাই। প্রত্যেকটা জায়গায় চুরি। চুরি আর ঘুষ। এ ছাড়া কিছু নাই।’
‘পালাব না, জেলে যাব’Ñ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘স্বীকার তো করেছেন, ওনারা জেলে যাবেন। জেলে তো যাবেন, সেটা নিশ্চিত। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয় এবং ইভিএমে কোনো নির্বাচন নয়। সরকার এতটাই ভয় পেয়েছে যে, শুক্রবার থেকে এখানে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। বিএনপির সমাবেশ নিয়ে যাতে লাইভ প্রচার না হয়, সে জন্য তারা এটা করেছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, খেলা হবে। খেলা যে হবে, কার সঙ্গে খেলব? আওয়ামী লীগ হচ্ছে থার্ড ডিভিশনের টিম। আর বিএনপি হচ্ছে ফাস্ট ডিভিশনের টিম। আগে পদত্যাগ করে আসুন, তারপর খেলা হবে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আজ প্রতিটি মানুষ জেগে উঠেছে। দ্রুত এই সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা বলছে যে বিএনপিকে হেফাজতে পরিণত করা হবে। সরকারকে বলব, সেদিন আর আপনাদের নেই।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান ফারুক। পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বরিশাল মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির জাহিদ, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপি সদস্য সচিব আকতার হোসেন মেদুল ও বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপি সদস্য সচিব মিজানুর রহমান মুকুল। সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন- নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু, সহদপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন, সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন, সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল কবির লাবু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
নেট সমস্যা : গতকাল শনিবার সকালে বরিশাল নগরীতে ইন্টারনেট বিপর্যয় ঘটে। মুঠোফোন ব্যবহারকারীরা নেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলেন। এতে ফেসবুক, ইমো ও হোয়র্টসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বন্ধ ছিল। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন সংবাদকর্মীরা। তারা গণসমাবেশস্থল থেকে সরাসরি সংবাদ প্রচার করতে পারেননি। তবে ব্রন্ডব্যান্ড প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা স্বাভাবিক ছিল।
‘মামাতো ভাই’ নিয়ে রসিকতা : গণসমাবেশে বক্তৃতা ও সেøাগানে আলোচিত উক্তি ছিল ‘মামাতো ভাই’। কেন্দ্রীয় নেতা হাবিন-উন-নবী সোহেল ও বিলকিস আক্তার জাহান শিরিনসহ অনেক নেতা বক্তৃতায় বলেছেন, বিএনপির সমাবেশ বন্ধ করার ক্ষমতা মামাতো ভাইয়ের নেই। সমাবেশমুখী মিছিলে বিএনপি নেতাকর্মীরা সেøাগান দেন- ‘হৈ-হৈ-রৈ-রৈ—-মামাতো ভাই গেলি কই’।
Comment here