নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর নিউ জুরাইন এলাকার একটি বার থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মদ, বিয়ার, ওয়াকিটকি, আসবাবপত্র আটক করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আইরিশ পাব অ্যান্ড রেস্তোঁরার বার থেকে এগুলো উদ্ধার করা হয়। রেস্টুরেন্টটিতে খাবারের ব্যবসার আড়ালে অবৈধভাবে দেশি-বিদেশি মদ বিক্রি করা হতো।
আজ শুক্রবার কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ এসব তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বার চালিয়ে আসছিল রেস্টুরেন্টটি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ছাড়া ওয়াকিটকি ব্যবহারের অনুমোদন নেই কারো। কেনো তারা ওয়াকিটিক রেখেছে সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, ‘মিথ্যা ঘোষণায় অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশি মদ আমদানি করে বিক্রি করছে। এসব ওয়্যারহাউসে অভিযান চালাতে গেলেই তারা আইনের আশ্রয় নেয়। বৈধভাবে মদ আমদানির শুল্ক ৪০০ শতাংশের বেশি। অনেক প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে মদ আমদানি করে বিক্রি করছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে বাইরে পাচার হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা।’
‘আইন অনুযায়ী সরকারি কোনো সংস্থা দেখতে চাইলে তাদের স্টকের মাল দেখাতে হবে। কিন্তু সম্প্রতি একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাতে গেলে তারা বাধা দেয়। উল্টো আদালতে মামলা করে। এতেই বোঝা যায় ভেতরে অবৈধ মাল আছে। অনেক প্রভাবশালী এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। স্বাস্থ্যহানিকর এই মদের মাধ্যমে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। বেআইনিভাবে মদ বিক্রি বন্ধে শুল্ক গোয়েন্দা অভিযান অব্যাহত রাখবে’, বলেন আবদুর রউফ।
কাস্টমস গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক তানভীর আহম্মেদ জানান, আইরিশ পাব অ্যান্ড রেস্তোঁরায় অবৈধ ও রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া ইলেকট্রনিক্স পণ্য রয়েছে বলে গোপন সংবাদ পায় কাস্টমস গোয়েন্দার মহাপরিচালক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার সহকারী পরিচালক আবু হানিফ মোহাম্মদ আবদুল আহাদের নেতৃত্বে একটি দল বৃহস্পতিবার রাতে ওই রেস্টুরেন্টে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় ইলেট্রনিক্স পণ্য পরিদর্শন ও গণনা করার পাশাপাশি রেস্টুরেন্টের বার পরিদর্শন করা হয়। এসময় ক্রেতাদের নিকট পারমিট দেখতে চাইলে কেউ পারমিট দেখাতে পারেনি।
তিনি আরও জানান, ওই রেস্টুরেন্টে কোনো বিদেশি উপস্থিত ছিলেন না। অভিযানের সময় প্রায় দুই হাজার বোতল দেশি-বিদেশি মদ, প্রায় পাঁচ হাজার ক্যান বিয়ার, ৬০টি ওয়াকিটকি, বিপুল পরিমাণ ইলেট্রনিক্স সামগ্রী এবং আমদানি করা আসবাবপত্র আটক ও জব্দ করা হয়। অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে যায় রেস্টুরেন্টের মালিকসহ অন্য কর্মীরা। আটক পণ্যসমূহ কাস্টমস আইন অনুযায়ী পণ্যসমূহ জব্দ ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কাস্টমস গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত তিন বছরে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ৪১৬ কেজি স্বর্ণ আটক করেছে। যার মূল্য ২২১ কোটি। দুই কোটি ৬৯ লাখ শলাকা সিগারেট আটক করা হয়েছে, যার মূল্য ১৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এছাড়া ৫ হাজার ৬১৩ বোতল মদ আটক করা হয়েছে, যার মূল্য ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
Comment here