নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্বল হয়ে অতি প্রবল থেকে প্রবল ঘুর্ণিঝড়ে পরিনত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। আজ শনিবার রাত ৯টার দিকে এটি পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মধ্যরাত নাগাদ বুলবুল বাংলাদেশের খুলনা উপকূল অতিক্রম করবে।
এদিকে দুর্যোগ মোকাবিলায় খুলনা-বরিশাল বিভাগের ৯ জেলায় ‘১০ নম্বর’ এবং চট্টগ্রামে ‘৯ নম্বর’ মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে সাতক্ষীরায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতি কমে ১৩ কি.মি থেকে ৮ কি.মি. এ নেমেছে। বাতাসের গতি বর্তমানে ১০০-১২০ কি.মি বেগে বইছে। মধ্যরাতে আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকলেও ঝড়ের কেন্দ্র সকাল নাগাদ বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করবে। উপকূল অতিক্রম করে বাংলাদেশের উপর দিয়ে বাতাসের গতি যাওয়ার সময় বুলবুলের বাতাসের গতি ৬২ থেকে ৮৮ কি.মি. থাকতে পারে।
এরই মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকার কয়েকটি স্থানে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। উপগ্রহ চিত্র থেকে এমনই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রবল বেগে ঝড় বইছে রাজ্যের সাগরদ্বীপ এলাকায়। সাগরদ্বীপ থেকে বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে স্থলভাগে প্রায় ১২০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে ঝড়টি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতিপথে রয়েছে সুন্দরবনের বদ্বীপ অঞ্চল।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জিনিউজ বলছে, এরই মধ্যে পশ্চিবঙ্গের বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কয়েকটি ঘর ভেঙে গেছে এবং চাল উড়ে গেছে। গাছও ভেঙে পড়েছে কয়েকটি জায়গায়। পশ্চিম মেদিনীপুরের খেজুরি, নন্দীগ্রাম, নয়াচর ব্লক ‘বুলবুল’র তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ হয়নি।
এর আগে দুপুর ১২টায় আবহাওয়া দপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর প্রভাবে নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলের দিকে ক্রমশ ধেয়ে আসায় মোংলা ও পায়রাকে সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ নম্বর মহবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। আর কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আজ দুপুর ১২টায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি দুপুর ১২ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আজ দুপুর থেকে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা সমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ও মুন ফেজের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে সাত ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে নৌবাহিনী জানিয়েছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি এবং বরগুনা এলাকায় উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য খুলনা বিএনএস তিতুমীরে পাঁচটি উদ্ধারকারী জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
Comment here