পর্দার আড়ালে কিছু হচ্ছে? - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

পর্দার আড়ালে কিছু হচ্ছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ইস্যুতে দলটির নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রকাশ্য আলোচনা না হলেও নেপথ্যে দুদলের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা কথা বলছেন, বিএনপি একটি সমঝোতায় আসতে চাইছে- এমন গুঞ্জন চলছে এখন রাজনীতির মাঠে। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে মেডিক্যাল বোর্ড বরাবর আবেদন করা হয়েছে বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসার অনুমতিপ্রাপ্তিতে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, তার সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফোনালাপে দলটির চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেছেন। মির্জা ফখরুল অবশ্য বলেছেন, এসব বিষয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল মঙ্গলবার পুনরায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন করা হয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার ‘মুক্তির’ বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি জামিন বা প্যারোল পেতে পারেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর ইস্যুতে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। এসব আলোচনার ভিত্তিতে সর্বমহলে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে, পর্দার অন্তরালে ‘কিছু একটা’ হচ্ছে। আদৌ তেমন কিছু হচ্ছে কিনা, দুদলের মধ্যে নেপথ্যে কোনো আলোচনা চলছে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন- এ যুক্তিতে গতকাল খালেদা জিয়ার আইনজীবী সগির হোসেন লিওন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জামিন আবেদন দাখিল করেছেন। আবেদনে বলা হয়েছে, দিনের পর দিন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। অন্যদের সাহায্য ছাড়া তিনি চলাফেরা করতে পারেন না; খেতেও পারেন না। এমনকি অন্যের সহযোগিতা ছাড়া ওষুধ সেবন পর্যন্ত করতে পারেন না। এ কারণে তার যুক্তরাজ্যের মতো দেশে অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্ট নেওয়া প্রয়োজন।

চলতি সপ্তাহে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য দাখিল করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। কিন্তু সরকারি দলের তরফে এমন কোনো আভাস পাওয়া যায়নি যে, আইনি প্রক্রিয়ায় জামিনপ্রাপ্তিতে তারা ছাড় দেবেন। প্যারোলে মুক্তি চাইলে সরকার তা বিবেচনায় আনতে পারে বলে ইতিপূর্বে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক। এর আগে হাইকোর্টের পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর এ মামলায় আপিল বিভাগও খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা জানান, চিকিৎসকদের প্রতিবেদন মোতাবেক কিছু শর্ত দিয়ে হলেও আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিলে তা সম্মানজনক হবে। সরকারকে বিভিন্ন মাধ্যমে বিএনপি এ বার্তা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এ জামিন দেওয়া হলেও তাদের সম্মতি আছে।

দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা চান, আদালতের মাধ্যমেই খালেদা জিয়ার জামিন হোক। তার পরিবার অবশ্য প্যারোলেও রাজি। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন এখনো তার অবস্থানে অনড়। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন- প্যারোল নেবেন না। গত সপ্তাহে তার পরিবার হাসপাতালে দেখতে গেলে তাদেরও তিনি ফের এ কথা জানিয়েছেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে তারা মাঠের কর্মসূচি বাড়াবেন। এর পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়াতেও লড়াই চলবে। তার শারীরিক অবস্থা এবং জামিন বিষয়ে কূটনীতিকদেরও ব্রিফ করবে দল। এর মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করা হবে, যেন তার জামিন আদায় করা যায় রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে। বিএনপির অধিকাংশ নেতার মতে, মাঠপর্যায়ে বড় ধরনের আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়; মুক্তি দেবে না সরকার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি আসতে পারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। আরেকটি পথও আছে- আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে তাকে মুক্ত করা কিংবা আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্তি দিতে সরকারকে বাধ্য করা। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনে আছি।

নেপথ্যে দুদলের আলোচনা চলছে কিনা- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আমাদের সময়কে বলেন, আড়ালে কেন, প্রকাশ্যেই তো আলোচনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে মৌখিক অনুরোধ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যার রেকর্ডও আছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, কিছু কিছু গণমাধ্যমে, টকশোতে বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আড়ালে-আবডালে আলোচনা করছেন। বাস্তবে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, ঘটার সুযোগ নেই। কারণ খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় জেলে আছেন। তার মুক্তির বিষয়ে পুরো এখতিয়ার আদালতের। তিনি বলেন, প্যারোলে মুক্তি চেয়ে লিখিত আবেদন করলে সরকার ভেবে দেখবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তো প্যারোলে মুক্তি চেয়ে আবেদনই আসেনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদ- এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। এ মামলায় হাইকোর্টে জামিন না পেয়ে গত বছরের ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগে জামিন আবেদন করেন খালেদা জিয়া। পরে এ আবেদনের শুনানি করেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর আবেদনটি খারিজ করে দেন আদালত।

বর্তমানে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাধীন। তার কারামুক্তিতে জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিন প্রয়োজন।

Comment here