নিজস্ব প্রতিবেদক : বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঝুঁকিতে- এমনটাই জানাচ্ছিলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। তবে পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা যায়, বাংলাদেশে বয়স্কদের পাশাপাশি শিশু, কিশোর ও যুবকরাও সমান তালে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪১ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন পাঁচজন। এ নিয়ে দেশে মৃত্যুর সংখ্যাটি ১৭ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘২৪ ঘণ্টায় ৭৯২টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা হয়েছে। নতুন করে শনাক্তকৃত ৪১ জনের মধ্যে ২৮ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারী। গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এটাই সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে দেশে করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা ১৬৪ জন।’
তিনি বলেন, ‘নতুন শনাক্তদের মধ্যে ঢাকায় ২০ এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার ১৫ জন রয়েছেন। ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জকে আমরা ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছি। সেখানে আমাদের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লা, কেরানীগঞ্জ ও চট্টগ্রামের একজন করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। বাকি তিনজন অন্যান্য এলাকার। আক্রান্তদের মধ্যে একজনের বয়স ১০ বছরের নিচে, চারজনের ১১-২০, ১০ জনের ২১-৩০, পাঁচজনের ৩১-৪০, নয়জনের ৪১-৫০, সাতজনের ৫০-৬০ ও পাঁচজনের ৬০ বছরের বেশি।’ এ তথ্য থেকে জানা যায়, একদিনে আক্রান্ত রোগীর ৭১ শতাংশই শিশু, কিশোর ও যুবক (মোট ২৯ জন)।
ডা. মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘নতুন মৃত্যু হওয়া পাঁচজনের মধ্যে পুরুষ চার ও নারী একজন। মৃতদের দুজনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, দুজনের ৫০-৬০ এবং একজনের ৪১-৫০ বছর। এদের মধ্যে দুজন ঢাকার ও তিনজন বিভিন্ন জেলার।’
করোনায় মারা গেলেন লালবাগের বাসিন্দা : করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে উত্তরার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগ থানার বড়ভাট মসজিদ এলাকার এক বাসিন্দা। এ খবরে পুরো ভাট মসজিদ এলাকা লকডাউন করে রেখেছে পুলিশ।
জানা গেছে, সর্দি ও কাশির উপসর্গ নিয়ে ওই ব্যক্তি প্রথমে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইইডিসিআরে তার নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করলে করোনা শনাক্ত হয় বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। এর পর গতকালই তাকে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ভাট মসজিদ ক্রিসেন্ট ক্লাবের সাবেক কোষাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মোহাম্মদপুরে ৬ রোগী শনাক্তের পর চার সড়ক লকডাউন : রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ছয়জন শনাক্তের পর চারটি সড়ক লকডাউন করে দিয়েছে পুলিশ। সড়কগুলো হলোÑ মোহাম্মদপুরের রাজিয়া সুলতানা রোড, তাজমহল রোডের ২০ সিরিয়াল রোড, বাবর রোডের একাংশ ও বসিলার পশ্চিম অংশ। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে এ চারটি সড়কের প্রবেশপথ লকডাউন করার পর থেকে কাউকে প্রবেশ এবং বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব এলাকার বাসিন্দারা লকডাউনের আওতায় থাকবেন বলে জানান মোহাম্মদপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. রাজীব মিয়া।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘মোহাম্মদপুরের চারটি সড়কে ছয়জন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নেতৃত্বে সড়কগুলো লকডাউন করা হয়েছে। স্থানীয়দের সতর্কতার জন্য মাইকিংও চলছে। সবাইকে বাসায় থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে ৩৩৩ নম্বরে কল দিয়ে কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া যাবে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়ার আগ পর্যন্ত সড়কগুলোতে কারও প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।’
চট্টগ্রামে দাওয়াতি কাজে ব্যবহৃত বাড়ি লকডাউন : গ্রামে ফিরতে না পেরে নগরীর খুলশীতে এক ভবনে আশ্রয় নেন তবলিগ জামাতের ২১ অনুসারী। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেন। তা না মেনে বাইরে ঘোরাঘুরি ও আশপাশের মসজিদে দাওয়াতি কার্যক্রম চালানোয় পুরো ভবন ও সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে ১৮টি বাড়ি লকডাউন করা হলো।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে তারা (তবলিগের লোকজন) বাড়ির বাইরে ঘোরাঘুরি করতেন। খুলশী এলাকার কয়েকটি মসজিদেও তারা নামাজ পড়তে যান। সেখানে দাওয়াতি কার্যক্রমও পরিচালনা করেন। এসব বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন। তাদের বাইরে যাওয়ার এবং ঘোরাফেরার ভিডিও এবং ছবি আমরা পাই। পরে তা যাচাই করে সত্যতা পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী ২২ এপ্রিল পর্যন্ত চারতলা ভবনে বসবাসকারী সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভবনে বসবাসকারী ১৬টি পরিবারের যে কোনো প্রয়োজনে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সহায়তা করবে।’
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত একজনের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া বলে জানানো হয়। এ বিষয়ে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে আলম বলেন, ‘আক্রান্ত ওই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জে ব্যবসা করেন। সেখানে তিনি আক্রান্ত হয়ে ঢাকার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকাতেই তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি ও পরিবার থাকেন সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নে। তার বাড়িসহ অন্য যে দুটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে সেগুলোর মালিক আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী।’
Comment here