দুলাল হোসেন : করোনার সংক্রমণের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে রেড (লাল), ইয়েলো (হলুদ) ও গ্রিন (সবুজ) জোন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। করোনা নিয়ন্ত্রণে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলকে রেড ও মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলকে ইয়েলো চিহ্নিত করে লকডাউন করে দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সংক্রমণ ঝুঁকির ওপর ভিত্তি করে জোনভিত্তিক লকডাউন চালু করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। গত ১০ জুন এ সংক্রান্ত একটি আদেশ দেশের সব সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা মেয়রের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের কোনো কোনো জেলা-উপজেলার সংক্রমণ ঝুঁকি বিবেচনায় রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে ঢাকা মহানগরসহ দেশের বেশিরভাগ জেলা-উপজেলায় জোনভিত্তিক লকডাউন চালু করতে পারেনি। সংক্রমণের ঝুঁকি অনুযায়ী ম্যাপিং না হওয়ায় জোনভিত্তিক লকডাউন কার্যক্রম আটকে রয়েছে।
করোনা প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ঢাকার ৪৫টি এলাকাকে অত্যন্ত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় রেড জোন হিসেবে লকডাউন করার সুপারিশ করে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭টি এলাকা রয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ১০টি এলাকা রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে বাংলাদেশ রিস্ক জোন বেজড কোভিড-১৯ কন্টেইমেন্ট ইমপ্লেমেন্টেশন স্ট্রাটেজি/গাইড শীর্ষক একটি কৌশল গত ৯ জুন চূড়ান্ত করা হয়। তাতে পূর্ববর্তী ১৪ দিনে রাজধানীর কোনো এলাকায় প্রতি লাখে ৬০ জনের অধিক করোনা রোগী শনাক্ত হলে এবং ঢাকার বাইরের কোনো এলাকায় ১০ জনের অধিক রোগী শনাক্ত হলে সেটিকে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করা হবে। একই সময়ে ঢাকার কোনো এলাকায় প্রতি লাখে ৩ থেকে ৫৯ রোগী এবং ঢাকার বাইরের কোনো এলাকায় ৩-৯ জন রোগী হলে সেই এলাকাকে ইয়েলো জোন ঘোষণা করে লকডাউন করা হবে। আর কোনো এলাকায় প্রতি লাখে ৩ জনের কম করোনা রোগী শনাক্ত হলে সেটিকে গ্রিন জোন।
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের কোন এলাকায় করোনার সংক্রমণ বেশি তার ম্যাপিং করছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা গত ১৪ দিনের নমুনা পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে সংক্রমণের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ও নিম্ন ঝুঁকির অঞ্চল চিহ্নিত করতে কাজ করছে। এরি মধ্যে রাজধানীসহ কয়েকটি জেলা-উপজেলা শহরের সংক্রমিত এলাকার ম্যাপিং শেষ পর্যায়ে, যা আজকালের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।
আইইডিসিআরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজধানী ও এর বাইরের সব অঞ্চলে সংক্রমণের ঝুঁকি এক রকম নয়। কোথাও বেশি আবার কোথাও কম। গত ১৪ দিনের নমুনা পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে কোন এলাকায় সংক্রমণ বেশি আর কোথায় কম সেটি তার ম্যাপিং করতে একটু সময় লাগছে। ইতোমধ্যে যেসব এলাকার কথা বলা হয়েছে, সংখ্যা তার থেকে একটু বেশি হতে পারে। দেখা গেছে, মিরপুরকে উচ্চ ঝুঁকির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পুরো মিরপুর তো রেড জোনে পড়বে না। হয়তো মিরপুরের কয়েকটি এলাকা রেড বা ইয়েলো জোনে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। কারণ কোনো অঞ্চলের একটি অংশের জন্য পুরো এলাকাকে লকডাউন করে দেওয়া যাবে না। রাজধানীর সংক্রমিত অঞ্চলের ম্যাপিং প্রায় শেষ পর্যায়ে। আজ মঙ্গলবার এই ম্যাপিংয়ের তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরের সংক্রমিত অঞ্চলের ম্যাপিং করার কাজও চলছে। এ তালিকা করতে একটু সময় লাগছে। সেগুলোর কাজও শেষ পর্যায়ে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম নগরভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ডিএনসিসির আওতাধীন যে ১৭টি এলাকা রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, সামনে ১৭টি এলাকায় লকডাউন হতে যাচ্ছে। সেগুলোর সুনির্দিষ্ট ম্যাপিং পাওয়ার পর ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে লকডাউন কার্যকর করা যাবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি বলেছি, যত দ্রুত আমাদের ম্যাপ দেওয়া হবে, তত দ্রুত ব্যবস্থা নেব। অনেক বড় বড় এলাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা চাচ্ছি যত কনফাইন করে আমাদের দেওয়া যাবে, তত আমাদের ম্যানেজ করতে সুবিধা হবে। রেড জোনিং সিস্টেম একটি হিউজ ম্যানেজমেন্ট। কাউন্সিলর, রাজনৈতিক ব্যক্তি, সামাজিক কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে মিলে কাজ করতে হয়।
এদিকে রেড ও ইয়েলো জোনে সাধারণ ছুটি থাকবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা নির্দেশনায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। ১৬ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত অফিস, গণপরিবহনসহ অর্থনৈতিক কর্মকা- কীভাবে পরিচালিত হবে এবং কোন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে, সে বিষয়ে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, লাল ও হলুদ অঞ্চলে অবস্থিত সামরিক ও অসামরিক সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি দপ্তরসমূহ এবং লাল ও হলুদ অঞ্চলে বসবাসকারী বর্ণিত দপ্তরের কর্মকর্তারা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তিন জোনে যেসব কাজ করা যাবে
রেড জোন
এক. স্বাস্থ্যবিধি মেনে বর্ধিত শিফটে কৃষিকাজ করা যাবে।
দুই. স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রামাঞ্চলে কলকারখানা ও কৃষিপণ্য উৎপাদনকাজ করা যাবে। তবে শহরে সব বন্ধ থাকবে।
তিন. বাসায় থেকেই অফিসের কাজ করবে।
চার. কোনো ধরনের জনসমাবেশ করা যাবে না। কেবল অসুস্থ ব্যক্তি হাসপাতালে যেতে পারবে।
পাঁচ. স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু জরুরি প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে পারবে। রিকশা, ভ্যান, সিএনজি ট্যাক্সি বা নিজস্ব গাড়ি চলবে না।
ছয়. সড়ক, রেল ও নদীপথে জোনের ভেতরে কোনো যান চলাচল করবে না।
সাত. জোনের ভেতরে ও বাইরে মালবাহী জাহাজ কেবল রাতে চলাচল করতে পারবে।
আট. মুদি দোকান, ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্ট শুধু হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু থাকবে। তবে শপিংমল, সিনেমা হল ও জিমনেসিয়াম ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
 
            


 
                                 
                                
Comment here