হত্যা মামলায় দীপু মনি ও জয় রিমান্ডে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

হত্যা মামলায় দীপু মনি ও জয় রিমান্ডে

মোহাম্মদপুরের মুদিদোকানি আবু সায়েদকে হত্যা মামলায় সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনির চার দিন এবং সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিন শুনানি শেষে এ রিমান্ড আদেশ দেন।

এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন এ রিমান্ড আবেদন করেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ইন্সপেক্টর জেনালের অব পুলিশ (আইজিপি) আব্দুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি হারুন-অর-রশীদ ও অতিরিক্ত যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমারসহ অজ্ঞাতনামা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও সদস্যরা খুনি, ক্ষমতালোভী ও নির্যাতনকারী হিসাবে ইতোমধ্যে চিহ্নিত।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। গত ১৮ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গতি সঞ্চার হয়। ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনকে দমানোর জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকার শুরু করে। আসামি শেখ হাসিনা এবং ওবায়দুল কাদের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়।

আবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই বিকেল ৪ টায় মোহাম্মদপুর থানাধীন বসিলা ৪০ ফিট চৌরাস্তায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করছিল। সেই আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। উক্ত সময় মোহাম্মদপুরস্থ বসিলা ৪০ ফিট চৌরাস্তায় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ (৪৫) রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। তার মাথার এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়।

এতে বলা হয়, আবু সায়েদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর স্বানীয়রা তার লাশ গ্রামের বাড়ী পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়োয়া বামনহাট ইউনিয়নের নতুন বস্তি প্রধানহটে পাঠিয়ে দেয় স্থানীয় বাসিন্দারা। সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। পুলিশের গুলিতে গরীব মুদি দোকানদার আবু সায়েদের মৃত্যু হয়। সচেতন নাগরিক হিসেবে অত্র মামলার বাদী আবু সায়েদ হত্যার বিচার দাবি করে এ মামলা করেছেন। ছাত্র-জনতার যৌতিক দাবিকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছিল। কোনো প্রকার উসকানি ছাড়া পুলিশ এজাহারে বণিত আসামিদের নির্দেশে অজ্ঞাতনামা পুলিশ সদস্যরা গুলি করে আবু সায়েদকে হত্যা করেছে।

আবেদনে বলা হয়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন চলাকালে তা শক্ত হাতে দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আসামি ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সময় শক্ত হাতে দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আসামি সাবেক ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) আব্দুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি হারুন-অর-রশীদ ও অতিরিক্ত যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার আন্দোলন দমাতে তাদের অধিনস্থ পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশকে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করার নির্দেশ দেয়। অন্যান্য অজ্ঞাতনামা পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর নির্দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটে।

রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার নিরীহ দ্বাত্র-জনতাকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে হত্যা করে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া আবশ্যক বিধায় বাদী এ মামলা করেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে এজাহার পর্যালোচনায় মামলার পূর্বের ও পরের ঘটনা বিভিন্ন পত্রপত্রিকাসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচারিত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ আগস্ট বারিধারা ডিওএইচএস এর বাসা হতে আসামি ডা. দীপু মনিকে (৫৯) গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে ডা. দীপু মনির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একইদিন রাতে আরিফ খান জয়কে (৫৩) গ্রেপ্তার করা হয়। এজাহারে বর্ণিত সহিংস ঘটনার বিষয়ে এবং মামলার ভুক্তভোগীকে হত্যার ঘটনা সংক্রান্তে আসামিদ্বয় জ্ঞাত আছে মর্মে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

আসামিদেরকে দশ দিনের পুলিশ হেফাজতে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এজাহারে বর্ণিত সহিংস ঘটনার বিষয়ে এবং মামলার ভিকটিমকে হত্যায় হুকুমদানকারী, উসকানিদানকারী ব্যক্তি ও ব্যক্তিদের নামসহ মামলার ঘটনার মূল রহস্য উদ্‌ঘাটন এবং মামলার অপরাপর আসামিদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

গত ১৯ আগস্ট রাতে ডা. দীপু মনিকে রাজধানীর বারিধারা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে, ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরিফ খান জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে গত ১৩ আগস্ট জনৈক ব্যবসায়ী এস এম আমীর হামজা (শাতিল) এ মামলা আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রে রাজেশ চৌধুরী শুনানি শেষে অভিযোগটি মোহাম্মাদপুর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর এ মামলাই ছিল তার নামে প্রথম মামলা।

Comment here