অতিলোভেই ভাগাড়ে আমদানির পেঁয়াজ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
চট্টগ্রামসমগ্র বাংলা

অতিলোভেই ভাগাড়ে আমদানির পেঁয়াজ

চট্টগ্রাম ব্যুরো : দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি করা হলেও বাজারের দামে তার প্রভাব পড়েনি, বরং উচ্চমূল্যই রয়ে গেছে। বিপরীতে আমদানি করা পেঁয়াজ আড়তে নষ্ট ও পচে যাওয়ায় তা ফেলা হচ্ছে ভাগাড়ে। সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীদের অতিলোভেই মজুদ করা পেঁয়াজ ফেলতে হচ্ছে ভাগাড়ে। হামিদুল্লাহ মিয়া বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস আমাদের সময়কে বলেন, পেঁয়াজের মূল্য অনেকটাই কমেছে।

কিন্তু আমদানি মূল্য বেশি হওয়ায় আগের দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া যে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে, তার অধিকাংশই পচা ও নিম্নমানের। এসব পেঁয়াজের অঙ্কুর গজিয়েছে। ফলে সেগুলো আড়তেই রাখা যাচ্ছে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে দেখা যায়, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৩ লাখ টন। সারাবছর আমদানি হয় ১১ লাখ টন। বাকি ১২ লাখ টন পেঁয়াজ দেশে উৎপাদন হয়। আমদানিকারকরা জানান, চীন, মিসর ও তুরস্কের মতো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে। কনটেইনার খোলার পর পেঁয়াজ দ্রুত বিক্রি করতে না পারলে পচন ধরে।

তাই আমদানিকারকরা বিক্রি অথবা আড়তে তোলার নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই বন্দর থেকে পেঁয়াজ খালাস করেন। এখন বাজারে দাম কমে যাওয়ায় খালাসে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানির হিসাবমতে, ভারত গত ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বের ২০টি দেশ থেকে ২ লাখ ৭৮৮ টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়। এখন ৪২ হাজার ৪২৮ টন পেঁয়াজ খালাস করেছেন আমদানিকারকরা।

খালাসের অপেক্ষায় আছে আরও ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ। গতকাল পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে আমদানি করা পেঁয়াজের মধ্যে অঙ্কুর দেখা দিচ্ছে সেসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৩০-৪০ টাকা, তুরস্কের ৪০-৫০, চীনা ২০-৩০ এবং মিসরীয় ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ ভোক্তা ও শিক্ষিকা শারমিল আক্তার আমাদের সময়কে বলেন, যে পেঁয়াজের জন্য আমাদের অধীর অপেক্ষা ছিল, সে পেঁয়াজ এখন রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। পচা পেঁয়াজ ফেলা হচ্ছে রাস্তায়। এটা অতিরিক্ত মুনাফার ফসল।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজারের সামনে ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখা যায় পচা পেঁয়াজ। রাস্তায় পড়ে থাকা পেঁয়াজ থেকে মোটামুটি ভালোমানের পেঁয়াজ বাছাই করছে নিম্নআয়ের মানুষ। তাদের অধিকাংশ শিশু ও কিশোর। তারা রাস্তা থেকে পেঁয়াজ কুড়িয়ে কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকায় বিক্রি করছে। পেঁয়াজ কুড়াতে ব্যস্ত থাকা কিশোর রমিজ বলেন, খাওয়ার যোগ্য পেঁয়াজগুলো খুঁজতে অনেক বেশি কষ্ট। বেশির ভাগ পেঁয়াজ একদম পচা।

রপ্তানিকারকদের এ কাজের প্রতি অসন্তোষ জানিয়ে খাতুনগঞ্জের মেসার্স মোহাম্মদিয়া বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মিন্টু সওদাগর বলেন, আমদানিকারকরা পচা পেঁয়াজ আমদানি করায় আমরা খুব বিপদে পড়েছি। এ রকম লোকসানের পর লোকসান হতে থাকলে আমাদের আর ব্যবসা করতে হবে না। চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম নির্মাণ করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিলে পণ্য নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বাঁচবেন।

 

Comment here