নিজস্ব প্রতিবেদক : অন্যকে ফাঁসাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেই ফেঁসে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রাজাকারদের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘অন্যকে ফাঁসাতে গিয়ে এবার আওয়ামী লীগ নিজেই ফেঁসে গেছে। প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় দেখা যায়, অধিকাংশই আওয়ামী লীগের চিহ্নিত নেতাকর্মী। এতে জনগণ বিস্মিত নয়, কারণ ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, নিশিরাতের এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে নিজেদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যবহার করতে গিয়ে নানারকম অঘটনের জন্ম দিয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কারও কারও বিচার হয়েছে। আবার কেউ কেউ আত্মীয়তার বন্ধনের কারণে দিব্যি বহাল তবিয়তে আছেন। সাম্প্রতিক সময়ে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করতে গিয়ে আরেক কেলেঙ্কারির জন্ম দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রকাশিত তালিকায় প্রমাণিত হয়েছে- জনগণের সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা সঠিক নয় বলে সমালোচনা করছেন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা। আবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন- তালিকায় বেশি ভুল প্রমাণিত হলে তা প্রত্যাহার করা হবে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের থলের বিড়াল বের হতে শুরু হওয়ায় তা প্রত্যাহারের প্রশ্ন ওঠছে। প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় আওয়ামী লীগের চেহারা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তারা এখন নিজেরাই কুতর্কে লিপ্ত হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের দোষ আর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর দায় চাপাচ্ছে। যেই মন্ত্রণালয়ই দায়ী থাকুক, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার মূল স্পিরিটের বিরোধী। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা হচ্ছে গণতন্ত্র-সাম্য-মানবিক মর্যাদা-এবং ন্যায় বিচার। এর কোনোটিই আওয়ামী রাজনীতির ঐতিহ্যে নেই। এদের ঐতিহ্য ময়দান থেকে বিরোধীদেরকে নিশ্চিহ্ন করে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দখলে রাখা।’
কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় পর কারারুদ্ধ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার স্বজনদের দেখা করতে দেওয়া হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে আদালতে পেশ করা মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টের সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থার বাস্তবে কোনো মিল পাননি তার বোনসহ পরিবারের সদস্যরা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখে বিনা চিকিৎসায় তিলে তিলে নিঃশেষ করাটাই এই সরকারের অভিপ্রায়। বাস্তবে তাই হতে চলেছে এখন। তিনি বর্তমানে ভয়াবহ জীবন মৃত্যুর সংকটের মধ্যে রয়েছেন। তিনি হাঁটাচলা করতে পারেন না। খেতে পারছেন না। হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোসহ শরীরের বিভিন্ন হয়ে ফুলে গেছে এবং এতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। জয়েন্টগুলো শক্ত ও বাঁকা হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসার অভাবে হাইলি অ্যাক্টিভ ডিফরমিং, রেমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনসহ বেশ কয়েকটি রোগ চরম আকারে পৌঁছেছে। তীব্র অসুস্থতায় কাতরালেও ডাক্তার আসেন না। ডাক্তার ঠিকমতো ওষুধ দিচ্ছেন না। রাত্রে ঘুমাতে পারেন না। ফাস্টিংয়ে তার সুগার থাকছে-১৪। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. শামীম এবং ডা. মামুনকে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যেতে দেওয়া হচ্ছে না। বাস্তবে দেশনেত্রীর কোনো চিকিৎসাই হচ্ছে না এবং ওষুধও দেওয়া হচ্ছে না। আদালতে সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টের নামে পেশ করা হলো গণভবনের ফরমায়েশি এক চোখা রিপোর্ট।’
রিজভী বলেন, ‘প্রথমে সঠিক রিপোর্ট তৈরি হলেও সরকার প্রধানের নির্দেশে বদলে ফেলা হয় সেই রিপোর্ট। প্রচণ্ড অসুস্থতায় জীবনের হুমকির মুখে থাকা মানুষকে কীভাবে সুস্থ বলে চিকিৎসকরা রিপোর্ট দিতে পারে?’
সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে ছিনি-মিনি বন্ধ করুন। তাকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে।
Comment here