অভিযানেও পেঁয়াজের লাগাম টানা যাচ্ছে না - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

অভিযানেও পেঁয়াজের লাগাম টানা যাচ্ছে না

অভিযান চালিয়ে এবং জরিমানা করেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না পেঁয়াজের বাজার। অভিযান শুরু হলে মুহূর্তেই দাম কমে যাচ্ছে; অভিযান শেষ হতে না হতেই আবার বেড়ে যাচ্ছে। খুচরা বাজারে গতকালও প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ২০০ টাকার আশপাশে।

ভারত আগামী মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরই পেঁয়াজের বাজারে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দেয়। রাতের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে দেশি পেঁয়াজের কেজি দাঁড়ায় ২২০ টাকায়। ১৯০ টাকা হয় আমদানির পেঁয়াজ।

বাজার নিয়ন্ত্রণে গত শনিবার থেকে বাজারে অভিযান শুরু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, কারসাজির অপরাধে গত চার দিনে সারাদেশে ৪৫০টি প্রতিষ্ঠানকে ২৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার পাশাপাশি কারসাজিকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্য ন্যায্য দামে বিক্রি করা হয়েছে এবং ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে।

অভিযান চালানো হয় পেঁয়াজের বৃহত্তম পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে। অভিযানের সময় দেখা যায়, পেঁয়াজের দাম কম। কিন্তু অভিযান শেষ হওয়ার পরই দাম আবার বেড়ে যাচ্ছে।

মালিবাগ, শান্তিনগর ও কদমতলীসহ রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ খুচরা দোকানে দেশি পেঁয়াজের কেজি এখনো ২০০ টাকা। কোথাও কোথাও ১০-২০ টাকা কমেও মিলছে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা পর্যন্ত।

মালিবাগ বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে আজ (মঙ্গলবার) ২০০ টাকা হয়েছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজ নতুনটা বিক্রি করছি ১৯০ টাকা। পুরনো কিছু আছে, সেগুলো ১৬০ টাকা বিক্রি করছি। পাইকারিতে খুব একটা দাম না কমায় খুচরায় সেভাবে কমেনি।’

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান মনে করেন, মূল্যস্ফীতির প্রভাব ও ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতার কারণে পরিস্থিতির বেশি অবনতি হয়েছে। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘আগে আমদানি পর্যায়ে কারসাজি হতো, এখন খুচরা বিক্রেতারা পর্যন্ত কারসাজি করছেন। এমন পরিস্থিতিতে হাতেগোনা অভিযান আর সামান্য জরিমানায় কাজ হবে না। আমাদের জনবল কম। কয়েকজন ব্যবসায়ীকে সামাল দেওয়া যাবে তাতে। তা ছাড়া যে শাস্তি দেওয়া হয়, তা সামান্য। এতে কারসাজি বন্ধ হচ্ছে না। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।’

গোলাম রহমান আরও বলেন, ‘আমরা রোগ নির্ণয় না করে সর্দিজ্বরের ওষুধ দিচ্ছি শুধু। আমাদের সবার আগে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। চাহিদা ও সরবরাহে নজরদারি থাকতে হবে। নীতি নির্ধারণে ভোক্তাস্বার্থও গুরুত্ব পেতে হবে। সময়মতো আমদানি করতে হবে। দেরিতে সিদ্ধান্ত এলে ততক্ষণে ক্ষতি বেড়ে যাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘বাজারে অভিযান চালিয়ে কয়জন ব্যবসায়ীকে জেলে ঢুকানো যাবে? এতে পণ্যমূল্যে প্রভাব পড়ে, কিন্তু সমাধান মেলে না। আমাদের চাহিদা ও সরবরাহের পরিসংখ্যানে নজরদারি থাকতে হবে। কখন ঘাটতি দেখা দেয়, কখন চাহিদা বেশি থাকে- এগুলো নজরে নিয়ে তার পরিপ্রেক্ষিতে সরবরাহ বাড়াতে হবে, সঠিক সময়ে আমদানি করতে হবে, বাজারে জোগান বাড়াতে হবে। এটা হচ্ছে প্রকৃত বাজার মনিটরিং। এগুলো ঠিকঠাক না থাকায় বাজারে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে।’

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, ‘পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোথাও পেঁয়াজ লুকিয়ে মজুদ করা থাকলে তা ন্যায্যমূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত অভিযান চলবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের জনবল কম থাকা সত্ত্বেও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে শুধু অভিযানে দাম কমবে, এমনটা নয়। আরও অনেক বিষয় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।’

Comment here