অভিযানে ক্লান্ত কোম্পানিগুলো আবাসিকে গ্যাস দিতে চায় - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
Uncategorized

অভিযানে ক্লান্ত কোম্পানিগুলো আবাসিকে গ্যাস দিতে চায়

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে সীমিত আকারে মিলতে পারে আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ। প্রায় এক যুগ ধরে চেষ্টা করেও আবাসিক খাতে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে পারেনি গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো। উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে। এ অবস্থায় বৈধ সংযোগ প্রদানের প্রস্তাব করেছে কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে আগে থেকেই সংযোগে আছে এমন বাসাবাড়ির বর্ধিতাংশে চুলার (বার্নার) পরিমাণ বাড়ানোর (ভার্টিক্যাল সংযোগ) চিন্তা করা হচ্ছে। কোম্পানিগুলো মনে করে, এতে সরকারের শত শত টাকার রাজস্ব আদায় হবে এবং অবৈধ সংযোগ নেওয়ার প্রবণতাও বন্ধ হবে। এ প্রস্তাব জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।

জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিতরণ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে সব শ্রেণির মানুষের চাহিদা এবং বাস্তবিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের কাছে। বিষয়টি তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরবেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষে আবাসিক খাতে সীমিত আকারে মিলতে পারে গ্যাসের সংযোগ।

জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, ২০১০ সালপরবর্তী সময় আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সারাদেশে অসাধু চক্র সাধারণ মানুষকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিতে উৎসাহিত করে। পর্যায়ক্রমে আবাসিক খাতে গ্যাস সংযোগ এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়ায়, যেখানে গ্যাস নেটওয়ার্ক আছে, সেখানেই অবৈধ গ্যাস সংযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় অবৈধভাবে গ্যাসের নেটওয়ার্ক পর্যন্ত বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর আওতাধীন নতুন নতুন এলাকায় অবৈধ পাইপলাইনও স্থাপন করা হয়েছে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সারা বছর অভিযান পরিচালনা করছে। তবে অভিযান সফল হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, একদিকে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, লাইন কাটা হয়েছে; আরেক দিকে অসাধু চক্র পুনঃসংযোগ দিয়ে দিচ্ছে। ফলে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান সফল হচ্ছে না। ওই কর্মকর্তা বলেন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বিশেষ করে আবাসিক খাতে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা না করে তাদের নিয়মের মধ্যে নিয়ে এলে বিদ্যমান গ্যাস ব্যবহার থেকে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব পাবে।

দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস শুরু থেকেই অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত তিতাসের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে জানান, ইতোমধ্যে সাড়ে ৮ লাখ অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিতাস গত দ্ইু বছরে ৩৩৬টি শিল্প, ৪৭৫টি বাণিজ্যিক, ৯৭টি ক্যাপটিভ পাওয়ার, ১৩টি সিএনজি স্টেশন এবং ৯৮৯ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন লাইন অপসারণ করেছে। মোট ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৭০টি গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তবু আমি বলব অভিযান সফল হয়নি। বিশেষ করে অনেক আবাসিক বাড়িতে অভিযানের সময় ঢোকা যায় না। নানা বাধা-বিপত্তি তৈরি হয়।’ তার মতে, নতুন করে সংযোগ অনুমোদন না দিলেও অন্তত আগে থেকেই সংযোগ আছে- এমন গ্রাহকদের চুলা বা বার্নার বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া উচিত। তা হলে অধিকাংশ অবৈধ গ্রাহক কমে যাবে।

তিতাসের আরেক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদের সময়কে বলেন, গত ২৫ এপ্রিল কারওয়াানবাজাস্থ তিতাস কার্যালয়ে জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিতাসের কর্মকর্তারা ভার্টিক্যালি অর্থাৎ আগে থেকেই যাদের গ্যাসের অনুমোদন আছে তাদের চুলা বা বার্নার বৃদ্ধির অনুমোদন যাতে দেওয়া হয় সেই প্রস্তাব করেন। কর্মকর্তারা মন্ত্রীকে বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বলেন, বার্নার বা চুলা বৃদ্ধির বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এমন অনুমোদনহীন চুলা রয়েছে। সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের বাড়িতেই কিছু না কিছু অনুমোদনহীন বার্নার বা চুলা রয়েছে। ফলে অন্তত ভার্টিক্যালি চুলা বৃদ্ধির অনুমোদন পেলে বিদ্যমান গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমেই গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রতি মাসে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পারবে। বৈঠকসূত্রে জানা যায়, তিতাসের কর্মকর্তাদের যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব প্রতিমন্ত্রী গুরুত্বসহকারে নিয়ে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের পর থেকে গ্যাসের অবাধ ব্যবহারে বিভিন্ন সময় নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। ফলে নতুন করে গ্যাসের সংযোগ অনুমোদন বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগে নিষেধাজ্ঞা আসে। ২০১২-পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিন হয়। সেই কমিটির অনুমোদনসাপেক্ষে শিল্পে সংযোগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েক বছর পর সেই কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এখন শিল্প-বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করা হলে কোম্পানিগুলোর বোর্ডের অনুমোদনসাপেক্ষে সংযোগ মেলে।

অন্যদিকে ২০১০ সালের পর অল্প সময়ের জন্য আবাসিক গ্যাস সংযোগ চালু করলেও কিছু দিন আবার সেটা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কার্যত ২০১০ সালের পর থেকে আবাসিক গ্যাস সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে। তবে বাস্তবে কোথাও সংযোগ বন্ধ নেই। সর্বত্রই আবাসিক খাতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ চলছে।

Comment here