বগুড়ায় আওয়ামী লীগের এত ভোট গেল কই- এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। দিন দিন ভোট বাড়লেও এবারের উপনির্বাচনে সেই ভোট কমেছে। এ নির্বাচনে খুবই কম ভোট পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয়ও উঠেছে সমালোচনার ঝড়। গত ১৮ বছরের মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতায় আওয়ামী লীগ পর পর তিনবার থাকলেও বগুড়ায় আগের চেয়ে ভোট কমে অর্ধেকের নিচে নেমেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮ বছর আগে ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-৬ সদর আসনে আওয়ামী লীগের মাহবুবুর রহমান নৌকা প্রতীকে ভোট পান ৫৪ হাজার ৭৭৭ ভোট। ২০০৮ সালে এই ভোট বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭৪ হাজার ৬৩৪। ২০০৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে এই ভোট এসে দাঁড়ায় ৬২ হাজারে। ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে দাঁড়ায় ৫৪ হাজারে। আর সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট পড়ে মাত্র সাড়ে ৩৭ হাজার। অথচ এবারের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভোট পান ৩২ হাজার ২৯৭টি।
নানা কারণে বগুড়ায় উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। বগুড়ায় কোন্দলে জর্জরিত দল বিএনপির কাছে বিশাল ব্যবধানে হারার বিষয়টি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই ভরাডুবির পেছনে দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, সুবিধাভোগী নেতাকর্মীদের দাপট, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমিদখল ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়াকে দায়ী করা হয়েছে।
নির্বাচনে খুব কম ভোট পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয়ও উঠেছে সমালোচনার ঝড়। বগুড়া শহর আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দ তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘আমরা কোনো কথা বলে বা উন্নয়নের আশ্বাস দিয়েও বগুড়ার মানুষকে নৌকার পক্ষে আকৃষ্ট করতে পারিনি। এমনকি আমাদের দলের নেতাকর্মীকেও আমরা আমাদের পক্ষে ভোট সেন্টারে উপস্থিত করাতে পারিনি। আমার মনে হয় এটা আমাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা।’
মানিক হক নামে একজন লিখেছেন, ‘যেদিকে দুচোখ যায় শুধুই আওয়ামী লীগ। তা হলে ভোটগুলো কোথায় গেল? রাজনীতি যখন ভাগ্য পরিবর্তনের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, তখন লাখ লাখ নেতাকর্মী থাকা অবস্থায়ও হাজার হাজার ভোটের ব্যবধানে হারতে হয়।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া শহর আওয়ামী লীগ ৫ বছর ধরে চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। একই অবস্থা সদর থানা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ক্ষেত্রে। সদর থানা আওয়ামী লীগের ৩ বছরের কমিটির বয়স এখন ৭ বছরে গিয়ে ঠেকেছে। এ ছাড়া যুবলীগ আড়াই বছর ধরে তাদের কমিটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারেনি। আর মূল দলসহ অঙ্গদলের প্রতিটি কমিটি ও আহ্বায়ক কমিটিই করা হয়েছে সিলেকশন করে।
অর্থাৎ মাঠের ত্যাগী নেতাকর্মীর কোনো সিদ্ধান্তই মানা হয়নি। এ ব্যাপারে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী টি জামান নিকেতা বলেন, প্রশাসন এখানে পক্ষপাতিত্ব করেছে। পুলিশের ভূমিকা ছিল বিতর্কিত। প্রশাসন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিএনপি প্রার্থীর জন্য তারা ভোটের মাঠে কাজ করেছে। এসব বিতর্কিত কারণও নৌকার হারার জন্য দায়ী। এই ভরাডুবির কারণ সম্পর্কে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু জানান, আমরা সবাই মিলেই কাজ করেছি। কাক্সিক্ষত ফল আনতে পারেনি। এটা মেনে নিতে হবে। আগামীতে আমরা আবারও চেষ্টা করব।
Comment here