আজ এক দফা ঘোষণা দেবে বিএনপি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

আজ এক দফা ঘোষণা দেবে বিএনপি

সরকার পতনসহ এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এ লক্ষ্যে আজ বুধবার রাজধানীতে ‘কয়েক লাখ লোকের’ জমায়েত ঘটিয়ে বড় ধরনের সমাবেশের মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। বেলা ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠেয় এ সমাবেশ থেকে যুগপৎ বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তুলতে একদফার যৌথ ঘোষণা দেবে দলটি।

এই সমাবেশ থেকে একদফা ছাড়াও ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র মেরামতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এ নিয়ে ৩১ দফাও ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

advertisement

এ দিন প্রায় একই সময়ে রাজধানীর ১৩ স্থান থেকে একই ঘোষণা দেবে ৩৭টি সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট এবং সংগঠন।

ঢাকায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দল এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার অবস্থানের সময় স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতে এই সমাবেশ করতে যাচ্ছে বিএনপি।

রাজধানীতে এই সমাবেশের এক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের (ডিআই) ঢাকার প্রতিনিধি ডানা এল ওল্ডসকে পাশে রেখেই গতকাল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে প্রশ্ন তোলেন, বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশে আসে কেন। তিনি বলেন, তারা অন্য দেশে যায় না। এ দেশে আসে, কারণ এখানে গণতন্ত্র নেই। এখানে নির্বাচন হয়নি, এখানে নির্বাচন হয় না।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের মধ্যে বিএনপি ও সমমনাদের একদফার ঘোষণাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সমাবেশে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে গণশক্তি দেখাতে চায় দলটি, যাতে বিদেশিদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এ জন্য বিএনপি পরিকল্পিতভাবে পশ্চিমা দুটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের সময়কে বেছে নিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক নীতিনির্ধারক বলেন, মার্কিন ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দল ঢাকায় সফরে নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে কথা বলবেন। এ সময়ে সমাবেশ হওয়াতে তারা বিএনপির জনসমর্থন ও গণশক্তি নিজ চোখে দেখতে পারবে। এই সমাবেশে একদফা ও যৌথ রূপরেখা ঘোষণার মাধ্যমে বিএনপি বিদেশিদের বার্তা দিতে চাইছে। বিদেশিদের সঙ্গে বৈঠকে দলের নেতারা একদফা ও যৌথ ঘোষণার ওপর কথা বলবেন।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতারা জানান, যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলন গড়ে তুলতে একদফার যৌথ ঘোষণা এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা থেকে আলোচনার ভিত্তিতে একদফায় রূপান্তর করা হয়েছে। এই একদফায় রয়েছে, ‘জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায়-বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পদত্যাগ ও বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি; নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা; বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার, ফরমায়েসি সাজা বাতিল এবং সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সূত্র জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহ ধরে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এই একদফা চূড়ান্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র মেরামতে কী করবে সে সম্পর্কিত ৩১ দফার একটি রূপরেখা ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে সবাই সরকারের পদত্যাগকে একদফা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলনের নতুন যাত্রা শুরু করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তিনি জানান, একদফার সঙ্গে রাষ্ট্র মেরামতের ভিত্তি হিসেবে যৌথ রূপরেখাও ঘোষণা হতে পারে।

বছরব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করলেও একদফার ঘোষণা এবং এর ভিত্তিতে নতুন কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। এ জন্য আজকের সমাবেশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল, ঢাকা মহানগর, জেলা ও বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে প্রস্তুতি সভা করেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সভায় ঢাকা মহানগর ও ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোকে জনসমাগম করতে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে বিএনপি বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা ঘোষণা করে। এর ভিত্তিতে এতদিন ধরে আন্দোলন করছে দলের নেতাকর্মীরা। এসব দাবি থেকে এখন একদফায় এসেছে দলটি।

১০ দফার দাবির সঙ্গে জামায়াত একাত্মতা প্রকাশ করে যৌথ ঘোষণা দিলেও এবার থাকছে না দলটি। জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াত এখন তাদের নিজস্ব কর্মসূচিতে থাকবে। আগামী ১৫ জুলাই সিলেটের সমাবেশের মাধ্যমে তাদের মহানগরভিত্তিক সমাবেশ শুরু হচ্ছে। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে একদফার ঘোষণা দিচ্ছেন না।

রাজধানীর আশপাশের জেলা থেকেও উল্লেখযোগ্য নেতাকর্মীর সঙ্গে সাধারণ মানুষও এতে অংশ নেবেন বলে আশা করছেন বিএনপি নেতারা। কীভাবে সমাবেশে আসবেন, কোথায় অবস্থান নেবেন তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের মাঝে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এই সমাবেশে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি অংশ নেবেন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনও।

কী ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে জানতে চাইলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, এটা নির্ধারণ করবেন দলের ভারপাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল মঙ্গলবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকও হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশ থেকে একদফার ভিত্তিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। গণঅনশন কিংবা সমাবেশ-কর্মসূচি শুরু হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও আলোচনায় আছে দেশব্যাপী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে পদযাত্রা, রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত মানব প্রাচীর, সমাবেশের মতো ধারাবাহিক কর্মসূচি। এসব কর্মসূচি দিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। সেসব কর্মসূচির মধ্যে রোডমার্চ, ঘেরাও এবং সর্বশেষ দাবি মানা না পর্যন্ত ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান কর্মসূচিও রয়েছে।

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দীর্ঘ সড়কে বিজয়নগর-কাকরাইল থেকে শুরু করে আরামবাগ পুলিশ বক্স পর্যন্ত ব্যাপক মানুষের সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে মহানগর বিএনপি। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ মহানগরের নেতৃবৃন্দ সব অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে নিয়ে সিরিজ বৈঠক করেছে।

মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘আমাদের এই সমাবেশ হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এ জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি। এই সমাবেশ জনসমুদ্রে রূপ নেবে। তিনি জানান, এই সমাবেশ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে হয় সে জন্য আমরা অনেক স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করেছি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে আমরা সহযোগিতা চেয়ে চিঠি দিয়েছি।

ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, গত ১৫ বছর ধরে গুম, খুন, হামলা, মামলাসহ নানাভাবে বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের সরকার নির্যাতন করছে। এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পালা। এ সময়ে কেউ আর ঘরে বসে থাকবে না। সবাই রাজপথে নেমে আসবে। নয়াপল্টনের সমাবেশে হবে এর বড় প্রমাণ।

এই সমাবেশকে ঘিরে আগের মতো পুলিশের কোনো বাধা নেই। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় পর গত দুদিনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করার সুযোগ পাচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, ২০০৯ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এক সমাবেশ উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতে মাইকিং করা গিয়েছিল। এই সরকার আর সেই সুযোগ বিরোধী দলকে দেয়নি।

দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিভাগের সব জেলার নেতাকর্মীদের এই সমাবেশে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এ ছাড়াও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এই সমাবেশ উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। গতকাল জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান বলেন, সমাবেশের অতীতের রেকর্ড ভেঙে দিতে নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বাড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নিজের তাগিদেই সমাবেশে অংশ নিতে মুখিয়ে আছেন তারা।

পৃথক প্ল্যাটফর্ম থেকে ৩৭ দলের একযোগে ঘোষণা : বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতন্ত্র মঞ্চ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ১২ দলীয় জোট, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, তেজগাঁও দলীয় কার্যালয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, আরামবাগে গণফোরাম-পিপলস পার্টি, জাতীয় প্রেসক্লাবে পৃথকভাবে গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর ও ড. রেজা কিবরিয়া অংশ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং নয়াপল্টন মসজিদ গলির দলীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিজয়নগরে এবি পার্টিও একদফা দাবিকে সমর্থন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে।

Comment here