আজ পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

আজ পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস

twitter sharing button
whatsapp sharing button

ঋতুর রাজা বসন্তের শুরু আজ। এ আনন্দ উদযাপনে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে বিশ্বভালোবাসা দিবস। ফুলের দোকানে তাই তারুণ্যের ভিড়। গতকাল রাজধানীর শাহবাগ থেকে তোলা -নজরুল মাসুদ

advertisement

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। হ্যাঁ, ঋতুচক্রের নিয়মে বসন্তকাল শুরু হলো আজ। ঋতুরাজের আগমনে নিষ্পত্র শাখায় এখন নবীন কিশলয়। অজস্র পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আভায় বৃক্ষরাজি হয়ে উঠেছে আগুনরঙা। তার আঁচ লেগেছে মনেও। সেই আঁচ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে আরেকটি উৎসব। আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। সব মিলিয়ে আজ আনন্দে-উৎসবে মাতোয়ারা হবে রাজধানী ঢাকাসহ পুরো দেশ। বিশেষ করে অমর একুশে বইমেলায় আজ ঢল নামবে বাসন্তী সাজের যুগলদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় আজকের উৎসব উদযাপনে উঠে আসবে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী রূপ। ভালোবাসা দিবস ও বসন্তকালকে বরণ করে নিতে রাজধানীতে আজ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

advertisement

ভোরের বাতাসে জেগে উঠছে নতুন প্রাণ। এ ঋতু ফুলের ঋতু। পশ্চিমের বসন্তে চেরি ফুলে ভরে ওঠে প্রকৃতি। আমাদের বসন্তের ফুলের যেন অভাব নেই। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কাঁঠালচাঁপা, কাঠগোলাপ, নাগেশ্বর, রুদ্রপলাশ, মহুয়া, রক্তকাঞ্চন, দেবদারু, স্বর্ণশিমুল কত কত ফুল। এ বসন্তে থোকায় থোকায় ফোটে নজরুলের প্রিয় ফুল দোলনচাঁপা। ফোটে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ফুল অশোক, পলাশ, শিমুল। এমন সময়েই আমের মুকুলের ঘ্রাণে পাগল হয়েছিল কবিগুরুর মন।

advertisement

মধুমাস চৈত্রের ঋতু বসন্ত। মধ্যযুগের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বলেছেন, ‘মধুমাসে মলয় মারুত মন্দ মন্দ। মালতীর মধুকর পিয়ে মকরন্দ।’ অর্থাৎ মধুমাসে মৃদুমন্দ বাতাস বয়, মৌমাছিরা ফুলের মধু খায়। প্রকৃতির মতো মানুষের মনেও এ সময় নতুন করে জাগে আনন্দভাব। এ ভাব প্রণয়ের। বৈষ্ণব পদাবলিতে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাসের মতো কবিরা এ ঋতু ঘিরে প্রেমরসের কবিতা লিখেছেন।

advertisement

বসন্ত ভালোবাসার ঋতু। অনুভব আর আবেগের ঋতু। পশ্চিমের ভ্যালেনটাইন’স ডে বা ভালোবাসা দিবসের ধারণা এসে মিলেছে আমাদের বসন্তে। বাংলা একাডেমি পঞ্জিকা সংশোধনের পর এখন পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস একই দিনে উদযাপিত হয়। ভালোবাসার মানুষকে আরও কাছে পাওয়ার সময় এ বসন্ত।

advertisement

বসন্ত শুধু প্রেমের ঋতুই নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির দ্রোহের ইতিহাসও। এমনই এক বসন্তে বাঙালি ভাষার জন্য আন্দোলন করেছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি ছিল ৮ ফাল্গুন। সেদিন মাতৃভাষার মর্যাদা রাখতে জীবন দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছিল বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন আর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ। সেদিক থেকে দেখতে গেলে বসন্তে রোপিত হয়েছিল বাংলাদেশের জন্মের বীজ। তেমনি আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এক চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল এমনই এক বসন্তে। ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রাণ দিয়েছিলেন জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দিপালীরা। সেই আন্দোলনের পথ বেয়ে নব্বইয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল গণতন্ত্রের স্বাদ।

আজ তরুণীদের খোঁপায় শোভা পাবে লাল-হলুদ গোলাপ, হাতে জড়ানো গাঁদা ফুল। তাদের কেউ সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা আনতে খোঁপায় গুঁজবে গ্লাডিওলাস, টিউলিপ কিংবা গাজরা।

বরাবরের মতো এবারও রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নামবে তারুণ্যের ঢল। প্রেম ও বিদ্রোহের মিশেলে এমন দিনকে বরণ করতে শাহবাগের ফুলের দোকান আর আজিজ মার্কেটের শাড়ি ও পাঞ্জাবির দোকানে গত কয়েক দিন ধরে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। ফুল, কার্ড, চকোলেট বিনিময়ের পাশাপাশি কবিতা ও ছন্দ মিশ্রিত বার্তায় আজ ভরে যাবে মুঠোফোনের ইনবক্স। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে থাকবে গহিন পরানের উষ্ণতা। টিএসসি, চারুকলা, শিল্পকলা একাডেমি, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বলধা গার্ডেন, বেইলি রোডের ফাস্টফুডের দোকান, ধানমন্ডি লেক ও রবীন্দ্র সরোবরে ছড়িয়ে থাকবে ভালোবাসা ও বসন্তের মিছিল। সারাদেশের মতো রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও নানা আয়োজনে আজ বসন্ত ও ভালোবাসাকে উদযাপন করবে। এবারের বসন্ত নতুন জীবনীশক্তিতে প্রকৃতি ও প্রাণকে ভরিয়ে তুলুক। বসন্তের দোলা লাগুক বনে, মনে। উল্লসিত মন গেয়ে উঠুক, ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে’।

ভালোবাসা দিবস এবং বসন্তকে বরণ করে নিতে রাজধানীতে রয়েছে নানা আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনব্যাপী সংগীতানুষ্ঠানসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করবে ‘বসন্ত উৎসব ২০২৩’। বিকাল ৪টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে সংগীত, কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, নৃত্য, বসন্তের পোশাক প্রদর্শনী ও কোরিওগ্রাফির নান্দনিক আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিবছর বসন্ত উৎসবের ছোঁয়া লাগে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একুশে গ্রন্থমেলাতেও। বিকালে জনস্রোত মিলিত হয় বইমেলাতে। এ ছাড়া বসন্তবরণ উৎসবে রাজধানীর লক্ষ্মীবাজারের বাহাদুর শাহ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, উত্তরার রবীন্দ্র সরণি মুক্তমঞ্চে থাকবে নানা আয়োজন।

Comment here