খুলনা ও আশপাশের এলাকায় গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আজ শনিবার সকালের মধ্যে যেকোনো সময় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ফণী। ঘূর্ণিঝড়টি ইতিমধ্যে দুর্বল হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে আঘাত হানার আগে এটা আরও দুর্বল হয়ে যাবে। গতকাল দিবাগত রাত তিনটার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভারতের ওডিশা উপকূল ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর ও কিছুটা দুর্বল হয়ে রাত তিনটায় ভারতের গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি স্থলভাগের ওপর দিয়ে আরও উত্তর-উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সকালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চল (সাতক্ষীরা–যশোর–খুলনা) এলাকায় পৌঁছাতে পারে।
বাংলাদেশ এবং এর উপকূলীয় এলাকায় গতকাল সকাল থেকে ঘূর্ণিঝড় ফণীর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে এবং দেশের অনেক স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগর উত্তল রয়েছে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে অর্ধশত বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কমপক্ষে পাঁচজন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, রাজরাজেশ্বরে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের সময় যে যাঁর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান হজরত আলী ব্যাপারী জানান, আজ শনিবার ভোরাত পৌনে চারটার দিকে ওই ইউনিয়নের শিলারচর, খাসকান্দি, মান্দের বাজার গ্রামের ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ঝোড়ো বাতাস বয়ে যায়। এ সময় মানুষের ঘরবাড়ি, গাছপালা উড়ে যায়। তিনি বলেন, আনুমানিক ৫০টি ঘর পুরোপুরি আর ৬টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতেমা জানান, তাঁরা মোবাইলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করতে ইউপির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাইমচরের ইউএনও ফেরদৌসী বেগম জানান, গভীর রাতের ঘূর্ণিঝড়ে হাইমচর ইউনিয়নে ১০ থেকে ১২টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় ফসলেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
Comment here