অনলাইন ডেস্ক : আত্মগোপনে থাকা তাবলিগ জামাতের শীর্ষ নেতা মাওলানা সাদ কান্দলভি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছে ভারতের পুলিশ। দিল্লির মারকাজ নিজামুদ্দিন মসজিদে ব্যাপক জনসমাগমের অভিযোগ ওঠার পর গত শনিবার শেষবারের মতো জনসম্মুখে দেখা যায় তাবলিগ জামাতের শীর্ষ এই নেতাকে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লির মারকাজ নিজামুদ্দিনে তাবলিগের ওই সমাবেশে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের মাধ্যমে দেশটির অন্তত ৪০০ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। শত বছরের পুরোনো ওই মসজিদে গত মাসে তাবলিগ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ধারণা, অন্তত ৯ হাজার মানুষ ওই তাবলিগ জামাতে অংশ নেন। যাদের অনেকেই বিদেশি এবং তারা সবাই করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে আছেন।
দিল্লি পুলিশের একাধিক সূত্র দেশটির জানিয়েছে, ৫৬ বছর বয়সী মাওলানা সাদ সম্ভবত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।
থানায় মাওলানা সাদ এবং তার সহযোগী আরও ছয় মারকাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ জনসমাগমের অভিযোগ এনেছে পুলিশ। অভিযোগ আনার পর থেকে আত্মগোপনে থাকা তাবলিগ জামাতের শীর্ষ এই নেতাদের খোঁজে উত্তর প্রদেশ এবং দিল্লিতে অভিযান পরিচালনা করছে দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা।
গত বুধবার মাওলানা সাদের দুটি অডিও ক্লিপ প্রকাশিত হয়েছে। এতে তাকে বলতে শোনা যায়, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দিল্লিতে স্বেচ্ছা আইসোলেশনে আছেন তিনি।
মারকাজের প্রকাশিত প্রথম অডিও বার্তাটিতে মাওলানা সাদ বলেন, মৃত্যুর জন্য মসজিদই সর্বোত্তম জায়গা। করোনাভাইরাস তার ভক্তদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না বলেও অডিওতে তাকে জোর দিয়ে বলতে শোনা যায়।
তবে দ্বিতীয় অডিও বার্তাটিতে ভিন্ন সুরে সরকারি নির্দেশনা মানতে ও বৃহৎ জনসমাগম এড়িয়ে চলতে ভক্তদের প্রতি আহ্বান জানাতে শোনা যায় তাকে। মাওলানা সাদ বলেন, নিঃসন্দেহে বিশ্বে যা হচ্ছে তা মানবতার অপরাধের ফল। আমাদের বাড়িতে থাকা উচিত। এটাই সৃষ্টিকর্তার ক্রোধ প্রশমিত করার একমাত্র উপায়। সকলকে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলতে হবে এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের সদস্যরা যেখানেই রয়েছেন, তারা সেখানকার প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলবেন।
তাবলিগ জামাতের শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘যেখানেই থাকুন না কেন, নিজেকে কোয়ারেন্টিনে রাখুন। এটা ইসলাম বা শরিয়তবিরোধী নয়।’
গত ২৩ মার্চ এক বক্তৃতায় সামাজিক দূরত্বের সতর্কতাকে মুসলমানদের একে অপরের কাছ থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেন মাওলানা সাদ। তিনি বলেন, ‘আপনি মৃত্যু থেকে কোথায় পালাবেন? মৃত্যু আপনার সামনে… এটা সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার একটি উপলক্ষ।’
এদিকে, পুলিশ ইতোমধ্যে মাওলানা সাদের বাসায় নোটিশ পাঠিয়েছে। পরিবারের সদস্যরা দিল্লি পুলিশের নোটিশ গ্রহণ করেছেন। তারা বলেছেন, তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিশের জবাব দেবেন। আত্মগোপনে থাকা তাবলিগ জামাতের এই নেতাকে গ্রেপ্তারে ১৪টি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করছে পুলিশ।
মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগে পুলিশ বলছে, তিনি সামাজিক দূরত্ব ও বড় ধরনের জনসমাগম বাতিলে সরকারের দেওয়া নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভক্তদের সমবেত হতে উৎসাহ দিয়েছেন। মারকাজ নিজামুদ্দিন ভবন খালি করতে পুলিশ দু’দফায় নোটিশ পাঠালেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি।
Comment here