ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ ও সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গত শুক্রবার বিএফডিসিতে এক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের উপস্থিতিতে এতে অংশ নেন তথ্য সচিব আবদুল মালেক, বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল করিম, চলচ্চিত্র প্রযোজক, চলচ্চিত্র পরিচালক, শিল্পী, কলাকুশলীসহ এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ওই কর্মসূচির ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই নিয়েই তুমুল সমালোচনা আর ট্রল করছে মানুষজন।
বিষয়টি নিয়ে দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন-এর পক্ষ থেকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী তারিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, দেশের যে কোনো সমস্যায় শিল্পীরা কিন্তু পাশে ছিল। দায়িত্ববোধ থেকে শিল্পীরা মাঠে নেমেছে, রাস্তায় দাঁড়িয়েছে। যে কোনো সময়ই হোক শিল্পীরা কিন্তু জনগণ ও সরকারের পাশেই ছিল। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানাতে ও মানুষকে সচেতন করতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আমরা ওইদিনও মাঠে নেমেছি। কিন্তু এটা নিয়ে মানুষের এমন মন্তব্য হবে আশা করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিল্পীরা কখনো অমানবিক নই, আমাদের মধ্যে মায়াবোধ আছে, দায়িত্ব আছে, বিবেকের তাড়নাও আছে। আমরা যখন দেখছি এই ডেঙ্গু সারা দেশে সয়লাব হয়েছে, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। তখন আমরা সবাইকে সচেতন করতে মাঠে নেমেছি। ওদিনের কর্মসূচিতে ঝাড়ু দেওয়া বা মশার ওষুধ দেওয়াই কিন্তু মূল বিষয় ছিল না। মূল লক্ষ্য, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের সচেতন হতে হবে। নিজেদের বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এটা শুধুমাত্র যে সরকার ও সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব তা কিন্তু না। নাগরিক হিসেবে এটা আমাদেরও দায়িত্ব। নিজের সুস্থতা ও পরিবারের সুস্থতার জন্য আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। ওই দিনের কর্মসূচিতে কিন্তু আমরা সে কথাই বলেছি।’
তারিন বলেন, ‘আমরা শিল্পীরা গিয়ে কি আপনার বাসাবাড়ি পরিষ্কার করে দিয়ে আসবো? আমরা কি আপনার পরিবারের অসুস্থতার সময় পাশে দাঁড়াবো? আপনার পরিবারের পাশে আপনাকেই থাকতে হবে। আমরা কিন্তু কেউ ওখানে মজা করতে যাইনি। আমরা চাই দেশের মানুষ সচেতন হউক, নিরাপদে থাকুক। আপনারা যারা আজ এটা নিয়ে বাজে মন্তব্য করছেন, তারা কি একটি বার ভেবেছেন এই রোগটি যদি আপনার পরিবারের কারো হয় তবে আপনার কেমন লাগবে। আমারও পরিবার আছে। আমি চাই না আমার পরিবারের লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ুক। বাজে মন্তব্য করা বাদ দিয়ে, নিজের বাড়ি ঘরের চারপাশটা দেখুন, কোথাও ময়লা আবর্জনা আছে কি-না। আপনারা সচেতন হোন, অন্যজনকেও সচেতন করুন। আমরা সচেতন থাকলে আজ এই পরিস্থিতি দেখতে হতো না। আমরা আমাদের শুটিং ও সব কাজ বন্ধ করে আপনাদের সচেতন করতে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। আমরা গিয়েছি আপনাদের বোঝাতে, মজা করতে না।’
‘মানুষের কথা-বার্তা শুনে মনে হচ্ছে, আমরা গিয়ে ময়লা নর্দমায় নেমে তা পরিষ্কার করে দিয়ে আসবো। কোনটা যে প্রতীকী কাজ আর কোনটা যে দৈনন্দিন কাজ এই পার্থক্য যদি মানুষ না বোঝে, তাহলে কি বলবো। এমন মন্তব্য দেখে, সত্যি অবাক হয়েছি।’
তারিন বলেন, ‘এই ঝাড়ু দেওয়া কিন্তু নতুন কিছু না। এর আগেও কিন্তু আমাদের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ঝাড়ু দিয়েছিলেন এবং ভারতেও কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সাহেব হাজার হাজার মানুষকে নিয়ে পরিষ্কার রাস্তায় ঝাড়ু দিয়েছে। সেটা নিয়ে কিন্তু কোনো কথা হয় নাই। এটা কিন্তু প্রতীকী হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কাউকে আঘাত কিংবা কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্য নিয়ে কিন্তু কাজটি করা হয়নি। ট্রল করা কিছু কিছু মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আপনি যত ভালো কাজই করুন না কেন, তারা সমালোচনা ও নেতিবাচক মন্তব্য করবেই। এটা তাদের কাজ। তাদের কথায় আমরা থেমে থাকবো না। দেশকে রক্ষা করতে ও দেশের মানুষকে সচেতন করতে আমরা কাজ করে যাবো।
Comment here