আপনারা চোখ-কান খোলা রাখবেন : মনিরুল - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

আপনারা চোখ-কান খোলা রাখবেন : মনিরুল

শ্রীলঙ্কা থেকে দেশে ফেরত আসা ১১ বাংলাদেশিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। তবে এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে ওই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

নিউজিল্যান্ডের পর শ্রীলঙ্কায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় সাউথ এশিয়ার বিভিন্ন দেশসহ সারা বিশ্ব এখন ঝুঁকির মধ্যে আছে। এ কারণে বাংলাদেশও এই ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে মন্তব্য করেছেন সিটিটিসি প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তবে সুনির্দিষ্ট হামলার কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই।

আজ শনিবার মনিরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সাউথ এশিয়ার বিভিন্ন দেশই ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমরাও ঝুঁকির মধ্যে আছি। কিন্তু সুনির্দিষ্ট হামলার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নাই। আমরা সবার কাছে অনুরোধ করছি, আপানারা চোখ-কান খোলা রাখবেন। সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন, কিছু সন্দেহজনক দেখলে আমাদের জানাবেন। পাশাপাশি আমরাও আমাদের নিয়মিত প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি। আমরা আশাবাদী, এখানে ঝুঁকি থাকলেও তারা সফল হবে না।’

শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরত আসা ১১ বাংলাদেশি সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ফেরত আসা ১১ জন ইব্রাহিম ইনসাফ আহমেদের একটা ফ্যাক্টরিতে কাজ করত। এদের আসলে অনেকে সুপারভাইজার ছিল, ম্যনেজার ছিল। আর এটা ছিল তামার একটা ফ্যাক্টরি। তামার যেসব জিনিসপত্র পাওয়া যায়, তা সেখানে তৈরি হতো। এগুলো তারা বিদেশে রপ্তানি করত। টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গিয়ে তারা সেখানে কাজ করত।’

কারখানার মালিকের সঙ্গে শ্রমিকদের যোগাযোগের বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘ফ্যাক্টরির মালিকের সাথে তাদের দুই-একবার দেখা হয়েছে মাত্র। এরা একেবারেই সাধারণ শ্রমিক। ফলে এদের সাথে মালিকের যোগাযোগের কোনো সুযোগও নাই। আর হয়েছিল কি না, সেটা জানার জন্যই আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। যেহেতু কারখানাটাই বন্ধ করে দিয়েছে। আর কাজ করার জন্য যে ওয়ার্ক পারমিট থাকে, সেটা অনেকেরই নাই। সে কারণে শ্রীলঙ্কা তাদের ফেরত পাঠিয়েছে। সেখানকার আমাদের যে হাইকমিশন আছে, সেখানে হস্তান্তর করেছে। সেখান থেকে হাইকমিশন তাদের দেশে পাঠিয়েছে।’

১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের আরও কারণ উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তারা টুরিস্ট ভিসায় গিয়েছিল। তাদের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়েছে। তাই বলা যায়, তারা সেখানে অবৈধভাবেই অবস্থান করছিল। আমরা নিয়মিত জিজ্ঞাসাবাদ যেটা সেটাই করছি। যেহেতু এত বড় একটা ঘটনা ঘটেছে এবং তারা ফেরত এসেছে। মধ্য প্রাচ্যেরও যাদেরকে আমরা সন্দেহ করি, তাদেরও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করি এবং একটা প্রোফাইল তৈরি করি।’

মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এই শ্রমিকদের সেইভাবে যদি কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নেই। এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে এই ঘটনার সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা কিংবা মালিকের সাথে তাদের কোনো প্রকার কথা-বার্তার সুযোগ হয়নি বলে জানা গেছে। তবে মালিককে তারা দূর থেকে শ্রমিক হিসেবে দেখেছে। এ ছাড়া আমরা এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাই নাই।’

জঙ্গি হামলার ঝুঁকির বিষয়ে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘সারা বিশ্বই আসেল ঝুঁকির ভিতরে আছে বলা যাবে। কারণ এখন বিশ্বের কোনো দেশের পক্ষেই সরাসরি বোধহয় বলা সম্ভব নয় যে, এখানে কোনো প্রকার সহিংসতা বা হামলা হবে না। সাউথ এশিয়ার দেশ হিসেবে শ্রীলঙ্কাতে ঘটনা ঘটেছে, ইন্ডিয়াতেও মাঝে-মধ্যে হচ্ছে। আর পাকিস্তান, আফগানিস্তানের কথা তো এটা দৈনন্দিন ঘটনা হয়েছে। সেই হিসেবে তো কম বেশি ঝুঁকি আছে। তবে সুনির্দিষ্ট হামলার হুমকি এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নাই।’

বাংলাদেশে হামলার ঝুঁকির বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে গ্রুপগুলোর নেটওয়ার্ক মোটামুটি আমরা ভেঙে দিয়েছি, দুর্বল করে দিয়েছি। তারপরও বিচ্ছিন্নভাবে এদের অনুসারীরা বাংলাদেশে আছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের কিছু সমর্থক আছে। তারা এই ঘটনার থেকে কিন্তু নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত হয়েছে। প্রথমত নিউজিল্যান্ডের ঘটনার পরে তাদের প্রতিশোধ গ্রহণের যে স্পৃহা, সেটি আমরা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া এবং আমাদের গোয়েন্দা তথ্য আন্যালাইসিস করে দেখেছি।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডের ঘটনার পর অনেকেই হামলা করা উচিত বা করতে হবে-এরকম প্রতিশোধ পরায়ণতা তাদের মধ্যে জেগেছে। এটি সত্য। হামলা করার জন্য তাদের যে সাংগঠনিক কাঠামো, সাজ-সরঞ্জাম, মনোবল, লজিস্টিক লাগে- আমরা মনে করছি, সেগুলো সংগ্রহ করা তাদের জন্য সময় সাপেক্ষ্য এবং কঠিন ব্যাপার। তাই সেই কাজটাকে আরও কঠিন করে দেওয়া অর্থাৎ যাতে হামলা না করতে পারে, সে কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়িয়েছি। আমরা আশাবাদী, এখানে ঝুঁকি থাকলেও তারা সফল হবেনা।

Comment here