আমার মেয়ে আখেরাতে পাস করবে দুনিয়ার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
শিক্ষাঙ্গন

আমার মেয়ে আখেরাতে পাস করবে দুনিয়ার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও

নুসরাত জাহান রাফির আলিম পরীক্ষার ফল আজ বুধবার প্রকাশ হয়েছে। যৌন নিপীড়নের পর হুমকি-ধামকি মাথায় নিয়ে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রসা কেন্দ্রে দুটি পরীক্ষায় অংশ নেন নুসরাত। পরীক্ষার ফলাফল বিবরণীতে দেখা যায়, কোরআন মাজিদ, হাদিস ও উসুলে হাদিস পরীক্ষায় নুসরাত জাহান রাফি ‘এ’ গ্রেড পেয়েছে। বাকি পরীক্ষায় আর অংশ নিতে পারেননি নুসরাত। যার কারণে অকৃতকার্য সম্বলিত ফল আসে নুসরাতের।

এদিকে আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের খবর পাওয়ার পর থেকে কান্না থামছে না নুসরাতের মা শিরিনা আক্তারের। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে ফেল করেনি। দুই বিষয় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে। সব পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারলে অবশ্যই পাশ করত। সিরাইজ্জার কারণে আমার মেয়ে পরীক্ষার ফলের পরিবর্তে কবরে। আমার মেয়ে দুনিয়ার পরীক্ষায় পাস করতে না পারলেও আখেরাতের পরীক্ষায় পাস করবে।’

পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নুসরাতের সহপাঠী ও স্বজনদের মাঝে নুতন করে শোকের ছায়া নেমে আসে। নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ও ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান ফলাফল জেনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। নোমান বলে, ‘আমার বোন নুসরাত ছাত্রী হিসেবে খুব মেধাবী ছিল। ১ ও ২ এপ্রিল দুটি পরীক্ষায় অংশও নেয় সে। পরে ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে তাকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়।’

ফলাফল প্রকাশের পর নুসরাতের আংশিক ফল জানতে পেরে শিক্ষকদের চোখেও নেমে আসে শোকের অশ্রু। মাদ্রাসার আরবি বিষয়ের প্রভাষক মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘নুসরাত ভালো ছাত্রী ছিল। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারলে ভালো ফলাফল করত। কলঙ্কিত একজন শিক্ষকের কারণে আজ উপজেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানটি কলঙ্কিত।’

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হোসাইন বলেন, ‘নুসরাত সবগুলো পরীক্ষা দিতে পারলে ভালো ফল করত। লেখাপড়ার প্রতি মেয়েটার কতটা আগ্রহ থাকলে এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় অংশ নেয়। আমি মনে করি সে আলিম পরীক্ষা থেকেও বড় পরীক্ষায় পাশ করেছে। খোদ নিজ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে।’

প্রসঙ্গত, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে ১৫২ জন পাস করে। নুসরাতসহ ২৭ অকৃতকার্য হয়। এ মাদ্রাসায় এবার পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাতকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা যৌন নির্যাতন করে। এ ঘটনায় সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। মামলা তুলে না নিতে রাজি না হওয়ায় আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গিয়ে গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে অধ্যক্ষের সমর্থকদের দেওয়া আগুনে ঝলসে যায় নুসরাতের শরীর। পরে ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুসরাত মারা যান। ফলে কোরআন ও হাদিস বিষয়ের ওই একটি পরীক্ষা বাদে বাকি পরীক্ষাগুলো দেওয়া হয়নি তার।

এ ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০ জুন থেকে এ মামলার বিচার শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত আট জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

Comment here