আড়তে পচছে পেঁয়াজ, বাজারে কমছে দাম - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

আড়তে পচছে পেঁয়াজ, বাজারে কমছে দাম

রেজাউল রেজা : চলতি সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। গত সপ্তাহে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ এখন পাওয়া যাচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। কিছুদিন আগেও দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮৫ টাকা পর্যন্ত ছিল। এদিকে চাহিদা কম থাকায় আড়তে পচছে আমদানি করা পেঁয়াজ। সবজির দাম অনেক কমেছে। তবে আলুর দাম কমছে।

গতকাল রাজধানীর পাইকারি বাজার শ্যামবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারভর্তি পেঁয়াজ। তবে ক্রেতা অনেকটাই কম। তার ওপর অনেক দোকানেই পচতে শুরু করেছে আমদানিকৃত পেঁয়াজ। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক পাইকার। অনেক আড়তে দেখা গেছে খারাপ মানের পেঁয়াজ আলাদা করে নামমাত্র দামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। অনেকে আবার বাধ্য হয়ে ফেলে দিচ্ছেন পচে যাওয়া পেঁয়াজ। বাজারের পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর ধারেও বেশ কিছু জায়গায় দেখা গেছে স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়েছে পচা পেঁয়াজ। দূর থেকেও গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে এসব পেঁয়াজের।

শ্যামবাজারের আজমেরী ভা-ার প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ী তপু সেন জানান, পাইকারিতে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম আগের তুলনায় অনেক কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা দাম কমেছে। তার পরও পেঁয়াজের বিক্রি বাড়েনি। আমদানি করা পেঁয়াজ বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না। ইতোমধ্যেই তার একাংশ পচতে শুরু করেছে। নষ্ট হতে থাকায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান যা দাম পাচ্ছে, সে দামেই পেঁয়াজ ছেড়ে দিচ্ছে।

তপু আরও বলেন, পাইকারিতে আজ (শুক্রবার) দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। একটু ভালো মানেরটা ৪২ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়েছি। অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি করছি ১৬ থেকে ২০ টাকা কেজি। আর যেগুলো নষ্ট হওয়ার পথে, সেগুলো ১২ টাকা থেকে শুরু করে যে দাম পেয়েছি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। এ ছাড়া অনেক পেঁয়াজ বিক্রি না করেই ফেলে দিতে হয়েছে।

আরেক ব্যবসায়ী বিক্রমপুর ট্রেডার্সের মালিক মো. খোকন বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধের পর বাজার সামাল দিতে মিসর, চীন, তুরস্ক, পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। দাম ততটা না কমায় বাজারে চাহিদা এখনো অনেক কম। আমদানি করা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা কষ্টকর। তাই সময়ের সঙ্গে তা পচেই যাচ্ছে।

রাজধানীর মালিবাগ বাজারের পাইকার প্রতিষ্ঠান খোরশেদ বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী মো. শাহবুদ্দিন জানান, এ বাজারের পাইকারিতেও দাম কমেছে। তবে শ্যামবাজার ও কারওয়ানবাজারের তুলনায় এদিকে দাম কিছুটা বেশি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে আমরা দেশি পেঁয়াজ ৫২ টাকা কেজি ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। বুধবারেও যা বিক্রি করেছি যথাক্রমে ৫৮ ও ৩৫ টাকা কেজি।

কারওয়ানবাজারের বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী মো. ফয়েজ বলেন, পেঁয়াজের দাম এখন কমতে থাকবে। আর কদিন পরেই বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠবে। তখন দাম আরও কমে আসবে বলে আশা করছি আমরা।

এদিকে গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও সবজির দাম কমতির দিকে রয়েছে। সরবরাহ বাড়ায় রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোয় শীতের সবজির দাম আরও কমেছে। বাজারে বেশ কয়েকটি সবজির কেজি এখন ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। শিমের কেজি এখন ২০ থেকে ৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা; গত মাসের শেষ দিকেও যা বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা। বাজারে বড় ফুলকপি ও বাঁধাকপির সরবরাহ বেড়েছে। প্রতি পিস ফুলকপি পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে এ দামে পাওয়া যেত ছোট ফুলকপি। মাঝারি আকারের বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মুলার দামও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। শালগমের দাম ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি। শতকের ঘর ছেড়ে গাজরের কেজিও বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এ ছাড়া বেগুন, করলা, ঢেঁড়শেরও দাম কমেছে। তবে পাকা টমেটো ও বরবটির দাম এখনো চড়া। বাজারে পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর কাঁচা টমেটো ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এ ছাড়া অপরিবর্তিত রয়েছে কাঁচামরিচের দাম। এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়।

কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা মো. বিলাল হোসেন বলেন, শীতের সবজির সরবরাহ প্রতিদিনই বাড়ছে। আগে ৬০ টাকার নিচে সবজি পাওয়া যেত না। এখন সেখানে বেশিরভাগ সবজির দাম ৪০ টাকার মধ্যে রয়েছে। আগামীতে দাম আরও কমবে।

এদিকে সরকারের নির্দেশের পরও খুচরায় পুরনো আলুর কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম অনুযায়ী খুচরা পর্যায়ে আলু বিক্রি হওয়ার কথা ৩৫ টাকা কেজি দরে। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে বাজারে নিয়মিত চলছে অভিযান। অথচ আলু বিক্রি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের মর্জিমতোই।

 

Comment here