নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ‘ইতিহাস বিকৃত’ করে অপরাজনীতিতে নেমেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জনপ্রিয়তার কারণে ইতিহাস বিকৃত করে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অসুস্থ ক্যাম্পেইন করছে। এসব বন্ধ করে দলটিকে দেশ ও জাতির স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের পথে
আসার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা শহীদ জিয়াউর রহমান বীরোত্তমকে বিতর্কিত করার হীনউদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচারের একটি সংগঠিত ঘৃণ্য অপতৎপরতা জাতি গভীর ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছে। ১৫ আগস্ট সরকারপ্রধান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে বিকৃত করার মাধ্যমে সে অপচেষ্টা নতুনভাবে শুরু করা হলো। এখন আর বর্তমান সরকারের কোনো রাজনীতি নেই। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অপরাজনীতিতে নেমেছে। আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরোত্তমকে নিয়ে এ ধরনের ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
একই সঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যে গণতান্ত্রিক চেতনা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, গত এক দশকের অধিককাল ধরে বর্তমান সরকার সেই চেতনাকে হিমাগারে পাঠিয়েছে। সেই চেতনাকে বিনষ্ট করে তারা একটি ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। শহীদ জিয়া ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোটি কোটি ভক্ত ও অনুরক্তরা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংগঠিত এই ষড়যন্ত্রকে শুধু ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যানই করছে না; নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্রকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়ার দৃপ্ত শপথ ঘোষণা করছে।
১৫ আগস্টের ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, জিয়াউর রহমানকে ১৫ আগস্ট হত্যামামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের কারা হত্যা করেছে, সেটা শেখ হাসিনার দায়ের করা মামলায় ইতোমধ্যে আদালতে নির্ধারিত হয়ে গেছে এবং এই হত্যার জন্য কোথাও জিয়াউর রহমানকে দোষারোপ করার মতো কিছুই পাওয়া যায়নি। ওই মামলায় জিয়াউর রহমান কিংবা তার ঘনিষ্ঠ কাউকে আসামিও করা হয়নি। কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগের মন ভরছে না। এখন তারা জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পৃক্ত করার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৫ আগস্ট হত্যামামলায় ফাঁসির দ-প্রাপ্ত এক আসামিকে মেজর (অব) মাজেদকে দিয়ে বন্দি অবস্থায় দেশের আইন, আদালত, শাসনব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সরকারের ?মুসাবিদায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ধারণ করা ভিডিও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারে বাধ্য করা এবং একই সাথে বেতনভুক্ত সাইবার ফোর্স নিয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৫ আগস্ট হত্যার সব আসামিকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত এবং রায় কার্যকর করার পর্ব প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে। এ অবস্থায় আইনিভাবে এ ধরনের বক্তব্যের কোনো সাক্ষ্যমূল্য নেই। এ পদক্ষেপ বরং সংঘটিত বিচার প্রক্রিয়া ও রায়কে নতুনভাবে বিতর্কিত করে তুলতে পারে। আইনবিরোধী এ ধরনের পদক্ষেপ আসলে অপরাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, কথিত মাজেদের জবানবন্দিতে বয়ান করা হয়েছে ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ে জড়িতদের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ১৯৭৫ সালের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি রেফারেন্স দিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। অথচ জাতি জানে, প্রকৃতপক্ষে সরকারপ্রধান নিজেও জানেন, ওই সময়ের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক কর্তৃক, জিয়াউর রহমান নয়। এই অধ্যাদেশটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ ৫০ নামে অভিহিত। ‘দ্য বাংলাদেশ গেজেটে’ প্রকাশিত অধ্যাদেশটিতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএইচ রহমানের স্বাক্ষরে।
আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, শহীদ জিয়াউর রহমানকে ঘিরে এই অপপ্রচার সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার। মাজেদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে মিথ্যা করা যাবে না।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের পর তার লাশের ওপর দিয়ে খোন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে যে মন্ত্রিসভা হয়েছিল, তারা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা বলে দালিলিক প্রমাণ তুলে ধরেন ফখরুল।
‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- প্রসঙ্গে’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৭২-৭৫ সালে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ রুদ্ধই শুধু করা হয়নি। হত্যা করা হয়েছে সিরাজ শিকদারসহ হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে, যার মাধ্যমে এ দেশে শুরু হয়েছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের ধারা। জাসদ গণবাহিনীর হাজার হাজার নেতাকর্মী সে সময়ে শিকার হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের নিষ্ঠুর রাষ্ট্রীয় হত্যাকা-ের। জন্ম হয়েছিল বিরোধী মতকে দমন করার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিচারবহির্ভূত হত্যার সংস্কৃতি। আজও ১৯৭২-৭৫ সালের সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যার সংস্কৃতি চলছে। গত ১১ বছরে বর্তমান সরকারের আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছে প্রায় তিন হাজার মানুষ। এসব হত্যাকা-ের সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অভিযোগ যা বাংলাদেশের দ-বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য। একদিন সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের বিচার ঠিকই হবে এ দেশে।
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে আবার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, চলমান করোনা বিপর্যয়, অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা ও জাতির এ ধরনের মহাসংকটকালে বিভাজন নয়, দরকার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে যে অসুস্থ ক্যাম্পেইন ও প্রপাগান্ডা শুরু হয়েছে তা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। আসুন দল-মত-নির্বিশেষ ঐক্যবদ্ধভাবে সুষ্ঠু গণতন্ত্রে যাই। আমরা পুনরায় ক্ষমতাসীন দলকে ইতিহাস বিকৃত করার এই ঘৃণ্য তৎপরতা পরিহার করে দেশ ও জাতির স্বার্থের জাতীয় ঐক্যের পথে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় এর দায়দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে।
Comment here