ই-কমার্স প্রতারণা ঠেকাতে পুলিশের ১৯ প্রস্তাব - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

ই-কমার্স প্রতারণা ঠেকাতে পুলিশের ১৯ প্রস্তাব

শাহজাহান আকন্দ শুভ : ই-কমার্স বাণিজ্যে প্রতারণা ও জালিয়াতি ঠেকাতে পুলিশের পক্ষ থেকে ১৯ দফা প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। পুলিশের ওই প্রস্তাবে প্রতারণা ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে ওষুধ এবং চিকিৎসাসামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ এবং কোনো দাহ্যপ্রদার্থ ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতেও প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের লটারি বা র‌্যাফল ড্রয়ের আয়োজন করতে না পারে সেদিকেও নজর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ই-কমার্স প্রতারণা ঠেকাতে এ ধরনের একটি প্রস্তাব পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে পাঠায়।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পুলিশের ওই প্রস্তাবের আলোকে কোনো কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যায় তা পর্যালোচনা করে দেখছে। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদ আমাদের সময়কে বলেন, কোনো মানুষ যাতে প্রতারিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে লক্ষ্য সামনে রেখেই আমরা প্রস্তাবগুলো করেছি। যাতে কোনো প্রতিষ্ঠান ই-কমার্সের নামে প্রতারণার আশ্রয় নিতে না পারে। তিনি আরও বলেন, যে কোনো পণ্য কেনার আগে ক্রেতাদের উচিত যাচাই-বাছাই করে পণ্যের অর্ডার করা। আবার পণ্যের অর্ডার দেওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেও প্রাথমিক খোঁজখবর নেওয়া। অধিক ছাড়ের প্রলোভনের ফাঁদে পা না দেওয়া।

পুলিশের ১৯ প্রস্তাবের মধ্যে আরও রয়েছে, ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা, ২০২১ এর নীতিমালা অনুসারে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে কিনা তা নজরে রাখা। চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলোভিত না হয়ে মার্কেটপ্লেস যাচাই করে পণ্য অর্ডার মূল্য পরিশোধের পরিবর্তে ক্যাশ অন ডেলিভারি অর্থাৎ পণ্য বুঝে পেয়ে মূল্য পরিশোধ করলে প্রতারণা এমনকি ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলতে পারে। ওয়েবসাইট, মার্কেটপ্লেস বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা সংশ্লিষ্ট সব বিবরণ ও শর্তাবলি যেমন- পণ্য ও মূল্য ফেরতের শর্তাবলি, পরিবর্তন, সরবরাহের সময়সীমা ইত্যাদি বিষয়ে সব শর্তাবলি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করার ব্যবস্থা রাখা।

কোনো প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল কমার্স বা ই-কমার্সের মাধ্যমে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা পরিচালনা করছে কিনা তা কঠোরভাবে দেখা। বিক্রেতাদের (seller) আর্থিক সুবিধার্থে পণ্য বিক্রয়ের ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রযোজ্য কমিশন ও সরবরাহ চার্জ কেটে রেখে বিক্রেতাপূর্ব মূল্য পরিশোধ কঠোরভাবে মেনে চলার ব্যবস্থা রাখা। পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্যে পরিশোধ করা হয়ে থাকলে ক্রেতা ও বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে ক্রয়াদেশ গ্রহণের পরবর্তী সর্বোচ্চ ৫ দিন এবং ভিন্ন শহরে বা গ্রামে অবস্থিত হলে সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি প্রদান বাধ্যতামূলক করা। পণ্যের অর্ডার নেওয়া পূর্বক পণ্য স্টকে আছে কিনা তা নিশ্চিত করা, প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের যথাযথ মনিটরিংয়ের জন্য আলাদা কমিটি গঠন করা, সারা দেশে ই-কমার্সের নামে যে আগ্রাসী মার্কেটিংয়ের দিকে ক্রেতা ও বিক্রেতারা যেন ঝুঁকতে না পারে সেদিকে নজর রাখা। সরকার কর্তৃক নিয়মিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোয় অডিট করে তাদের কার্যক্রম নজরদারিতে রাখারও প্রস্তাব করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।

পুলিশের পক্ষ থেকে আরও প্রস্তাব করা হয়েছে, গ্রাহকের অর্থ যাতে অন্যত্র পাচার তথা আত্মসাৎ না হয় তা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা রাখা, যে সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা, এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদারকির জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। এ ক্ষেত্রে ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা ২০২১ নামে একটি নীতিমালা কার্যকর থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। এ ক্ষেত্রে ‘ডিজিটাল ই-কমার্স অ্যাক্ট’ নামে একটি আইন প্রণয়ন করা এবং ক্যাশ অন ডেলিভারি চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ।

 

Comment here