সারাদেশ

একদিন আগেই সমাবেশস্থল ভরে গেছে নেতাকর্মীতে

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা ও ফরিদপুর প্রতিনিধি ; গণপরিবহনে ধর্মঘট থাকায় অন্যান্য জেলার সঙ্গে ফরিদপুরের বাস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ হলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ধর্মঘট উপেক্ষা করে আশপাশের জেলা থেকেই এরই মধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে পৌঁছে গেছেন।

আজ শনিবার বিচ্ছিন্ন ফরিদপুরে ষষ্ঠ বিভাগীয় গণসমাবেশ করবে বিএনপি। ধর্মঘটের কারণে গত তিন দিন আগে থেকে নেতাকর্মীরা ফরিদপুর শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে আসতে থাকেন। গতকাল সন্ধ্যায় এই মাঠ নেতাকর্মীতে ভরে যায়। দুপুর ২টায় গণসমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও আগেই কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও প্রধান বক্তা স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সমাবেশস্থলে পৌঁছে নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।

এদিকে গতকাল বিকালে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ‘বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে গণমিছিল করেছে। বাস ধর্মঘট থাকায় এই গণমিছিলে নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাক, ইজিবাইক, নসিমনে করে আসেন। আলীপুর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সামনে থেকে বিশাল একটি মিছিল বের হয়ে নিলটুলী, ঝিলটুলী, মুজিব সড়ক, থানা রোড হয়ে জনতা ব্যাংকের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য রাখেন। তারা হুশিয়ারি দেন, বিএনপির সমাবেশের নামে কোনো নৈরাজ্য করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে দলের নেতাকর্মীদের মৃত্যুর প্রতিবাদে গত ১২ অক্টোবর থেকে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর ও বরিশালে গণসমাবেশ হয়েছে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, বিভিন্ন জায়গায় নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া ও হয়রানি করা হচ্ছে। তারপরও গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে এসেছেন। এ ছাড়া গত বুধবার থেকে ফরিদপুরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। হোটেলে-হোটেলে গিয়ে তারা তল্লাশি চালিয়েছে। কিন্তু আমাদের গণসমাবেশ সফল হবেই।

যেভাবে রাত কাটাচ্ছেন নেতাকর্মীরা

গণসমাবেশে যোগ দিতে গত বুধবার থেকে ফরিদপুরে আসতে শুরু করেন নেতাকর্মীরা। এদের একটি অংশ কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে প্যান্ডেল বানিয়ে মাঠে রাত কাটাচ্ছেন। কেউ সমাবেশস্থলের আশপাশে দুদিনের জন্য ঘর ভাড়া নিয়েছেন। গোপালগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা রাজু বিশ্বাস এসেছেন গত বৃহস্পতিবার। তিনি জানান, শীতের রাত থাকায় সাড়ে ৬ হাজার টাকায় একটি তাঁবু কিনেছেন। সঙ্গে কম্বল, গামছাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও এনেছেন।

কোমরপুর গ্রামের মিয়া বাড়ির আবদুস সালাম জানান, অন্যান্য জেলা থেকে অনেক নেতাকর্মী এসেছেন। তারা আমাদের মেহমান। সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছি। বাড়ির ৩টি ঘর ছেড়ে দিয়েছি। অম্বিকাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার বদিউজ্জামাল পলাশ জানান, আগত মেহমানদের আপ্যায়ন করতে সাধ্যমতো গ্রামের সবাই এগিয়ে এসেছেন। তাদের গোসল, বিশ্রামসহ সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছেন গ্রামবাসী।

শীতের রাতে সমাবেশের মাঠে খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করায় বয়স্করা অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ঠান্ডাজনিত সমস্যায় মাদারীপুর জেলা যুবদল নেতা ওয়াহিদ খানকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

প্রবেশপথসহ বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি

গতকাল শুক্রবার ফরিদপুর শহরের প্রবেশপথসহ বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ তল্লাশি করেছে। শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের সংযোগ মোড়ে পুলিশের তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে।

ফরিদপুর ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক তুহিন লস্কর গণমাধ্যমকে জানান, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির নির্দেশে ফরিদপুরে পাঁচ দিনব্যাপী সড়কে বিভিন্ন যানবাহন তল্লাশির জন্য একটি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে শহরের বিভিন্ন প্রবেশপথে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে গাড়িগুলো তল্লাশি করা হচ্ছে। ফরিদপুর সদর উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলাতেও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন বলেন, এ রকম সমাবেশের নামে অনেক সময় অপরাধীরা ঢুকে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার তল্লাশির সময়ে মাদকসহ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এটা তাদের রুটিন কাজ। সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তারা কিছু করছেন না।

মাঠের পাশে রান্না ও খাওয়া

কোমরপুরের আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠের পাশে ১০টি চুলায় খিচুড়ি রান্না করা হচ্ছে। রান্নার কাজে নিয়োজিত বাবুর্চি মো. আবদুল আলী (৩৫) জানান, দুপুর থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আমরা ৪২ ড্যাগ খিচুড়ি রান্না করছি। এই খিচুড়ি ১০ হাজার লোক খেতে পারবে। তিনি আরও জানান, রান্নার কাজে আমরা ৪০ জন আছি।

বাস বন্ধে দুর্ভোগ চরমে

ফরিদপুরে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। শফিকুর রহমান নামে এক চাকরিজীবী পরিবার-পরিজন ও শিশুসন্তান নিয়ে বাস না পেয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চেপে দৌলতদিয়া ঘাটে রওনা হন। তিনি জানান, তার শাশুড়ি গুরুতর অসুস্থ, তাই আজই জেতে হবে।

রাজবাড়ী ও শরীয়তপুর থেকেও বাস চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, রাজবাড়ী থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। ছোট ছোট যানে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। এ জন্য অন্যান্য দিনের তুলনায় অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা কোনো বাস রাজবাড়ীর ওপর দিয়ে যেতে দেখা যায়নি।

শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, শরীয়তপুরের সঙ্গে ফরিদপুরে দুদিনের জন্য সব ধরনের বাস চলাচলও বন্ধ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। ফলে অটোরিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে তাদের।

আট রুটেও বাস বন্ধ

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ আটটি রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতের পর চুয়াডাঙ্গা থেকে এসব রুটে যাত্রীবাহী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শনিবার রাতের আগে বাস ছাড়ার সম্ভাবনা নেই। রুটগুলো হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, বরিশাল ও পটুয়াখালী।

 

Comment here

Facebook Share