এক-দেড় মাসের মধ্যে কারাগারে যেতে হবে, শঙ্কা মির্জা ফখরুলের - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
রাজনীতি

এক-দেড় মাসের মধ্যে কারাগারে যেতে হবে, শঙ্কা মির্জা ফখরুলের

আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে কারাগারে যেতে হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমান রচিত ‘নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান ও কিছু কথা’ নামক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জহির উদ্দিন স্বপন তার বক্তব্যে ৯০-এর গণঅভ্যুত্থান-দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোসহীন নেতৃত্বকে সামনে এনেছেন। একটা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিবর্তনের যে সূচনা সামনে এনেছে। আমার মনে হয়েছে নতুন ধারণা ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পরিবর্তন এনেছে। যেটা আজকের দিনের জন্য সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। সেটা হচ্ছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেইদিন বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। উপদেষ্টামণ্ডলীদের নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করেছেন সেটা ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নতুন ধারণা। এর আগে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়েছে। প্রথমবার অসমারিক-বেসামরিক নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের পরিচালনায় নির্বাচন হয়েছে। সবচেয়ে ভালো নির্বাচন হয়েছিল ‘৯১-এর নির্বাচন।’

তিনি বলেন, ‘ওই ধারণা থেকেই কেয়ারটেকার গভর্মেন্টের ধারণা উঠে এসেছে। সেই ধারণা থেকে আমরা বাংলাদেশের মানুষ একই জিনিস চাই। প্রায় ৩০ বছর পরে একই কথা বলতে হচ্ছে। নির্বাচন তো আমরা চাই, নির্বাচন ছাড়া তো পরিবর্তনের কোনো উপায় নেই- এটা আমরা যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমাদের অভিজ্ঞতা অনুসারে আমরা দেখছি, দলীয় সরকারের অধীনে হলে তা নিরপেক্ষ হয় না, বিশেষ করে সরকারের যদি আওয়ামী লীগ থাকে তাহলে তো কখনোই নিরপেক্ষ হয় না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আবার জাতি একটি যুগসন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছে। জাতি আজকে মুখোমুখি হচ্ছে, রাজনৈতিকভাবে জাতি টিকে থাকবে কি থাকবে না। জাতি কি গণতান্ত্রিক অস্তিত্বে টিকে থাকবে, কি থাকবে না। আজকে দুর্ভাগ্য, ১৯৭১ সালে যারা যুদ্ধ করেছি, ৯০-এর দশকে যারা গণতন্ত্রেও জন্য লড়াই করেছে এবং জীবন দিয়েছে- এই স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে গণতন্ত্র সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে গেছে; গণতন্ত্রকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমান উল্লাহ আমানকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর মিথ্যা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে, কারাগারে যেতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় গৃহবন্দী অবস্থায় আছেন, তারেক রহমান নির্বাসিত অবস্থায় আছেন। আমি আজ আদালতে গিয়েছিলাম। হাজার হাজার নেতাকর্মী কোর্টের বারান্দায়। কেউ বিভিন্ন আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। এই দৃশ্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশের দৃশ্য হতে পারে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অনেক বুদ্ধিজীবী টেলিভিশন টকশোতে কথা বলেন। কিছু সংখ্যক তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত ভদ্রলোক গণতন্ত্রের কথা বলেন। তারা প্রমাণ করতে চান, শেখ হাসিনা গণতন্ত্র নিয়ে এসেছেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় দল এবং আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আছেন, তথাকথিত সম্পাদকরাও আছেন, বুদ্ধিজীবীরাও আছেন।’

তিনি বলেন, ‘তাদের কাছে আমার অনুরোধ দয়া করে ঢাকার নিম্ন আদালতে যান, গিয়ে দেখুন একেবারে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে- এই দেশের সমাজের বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে যারা অতীতে কাজ করেছেন তাদের সবাইকে এক কাতারে দাঁড়িয়ে আদালতে গিয়ে হাজিরা দিতে হচ্ছে।’

ফখরুল বলেন, ‘এমন একটি বিচারব্যবস্থা তৈরি করেছে, বিচার ব্যবস্থায় হাইকোর্ট যদি জামিন দেয়। সেটা নিয়ে যদি নিম্ন আদালতে যান, সেখানকার সবচেয়ে যে জুনিয়র বিচারক আছেন তিনি নির্ধারণ করেন জামিন দেবেন কি, দেবেন না। তিনি জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।’

তিনি বলেন, ‘আজ আমার সঙ্গে নিম্ন আদালতে ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ, আরেকজন ছিলেন ৯০-এর গণঅভ্যূত্থানের নেতা খায়রুল কবির খোকন, যারা আমরা হাজিরা দিতে গিয়েছিলাম। গত কয়েকদিন আগে আমার মামলার বিচারকাজ শুরু হয়েছে। আমার ধারণা আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে আমানের মতো আমাকে ভেতরে (কারাগারে) চলে যেতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তাদের উদ্দেশ্য অত্যন্ত পরিষ্কার। যারা এই সরকারের বিরোধিতা করছে, যারা এই সরকারের পক্ষে নয়, যারা এই সরকারকে বলছে, ‘‘তুমি অনেক খারাপ কাজ করেছ, তুমি সরে যাও।’’ তাদের সবাইকে কারাগারে ঢুকিয়ে দেবে। এ লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয় চারজনের একটি সেল তৈরি করেছে, সেই সেলে পরিষ্কার করে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে যে, অতিদ্রুত সেই মামলাগুলো চিহ্নিত করবে তাদের ভাষায় চাঞ্চল্যকর মামলা এবং রাষ্ট্রবিরোধী মামলাগুলো অতিদ্রুত রায় দেওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এভাবে তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন ধ্বংস করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, যেটা অতীতে তারা করেছিল; এটা এখন কেউ বলেন না। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না- এটা বললে তাদের জ্বালা ধরে। আওয়ামী লীগকে প্রশ্ন করি, ১৯৭৫ সালে আপনারা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেননি? আপনাদের দুঃশাসনের কারণে সেদিন দুর্ভীক্ষ হয়নি? চার লাখ লোক সেদিন মারা যায়নি? আপনাদের দুঃশাসনের প্রতিবাদ করার কারণে ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করেননি? ৭২-এ আপনারা প্রথম সংবিধান পরিবর্তন করে বিশেষ ক্ষমতা আইন আনেননি? আপনারা জরুরি অবস্থা জারির বিধান নিয়ে আনেননি?’

গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এরা একটাও মন খুলে লিখতে পারে না। যে লিখতে যায়, তার ওপর নেমে আসে মামলার খড়গ- ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ বিভিন্ন রকম মামলা। সাংবাদিকদের হিসাব অনুযায়ী শতাধিক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সাগর-রুনির মামলার কোনো হিসাব মিলল না। কিন্তু ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলার তদন্তসহ সব কিছু দ্রুত হয়ে যায়। যেটা তাদের জন্য প্রয়োজন, সেটা দ্রুত হয়।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অনেক কথা বলেছি, আর কথা বলতে চাই না। এই সরকার এমন একটি ভয়াবহ সরকার যে সরকার ন্যূনতম সম্মান বোধ করতে জানে না। ড. ইউনূস বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলবিজয়ী। তাকে এমন অবস্থা করেছে, তাকে কারাগারে ঢুকিয়ে ছাড়বে। গতকাল একজন মন্ত্রী বলছেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টকেও তো জেলে যেতে হয়। ওই মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলব, আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে যে কারণে জেলে যেতে হয়, সেই কারণ ড. ইউনূসের না। ড. ইউনূসকে আপনারা ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা এবং শত্রুতার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে এসে তাকে কারাগারে পাঠানোর চেষ্টা করছেন।’

তিনি বলেন, ‘আবার আমাকে বলে আমি নাকি ড. ইউনূসের ওপর ভর করেছি। আরে ড. ইউনূসের ওপর ভর করার কোনো কারণ নেই। আমরা এই দেশের জনগণের ওপর ভর করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, এই দেশের জনগণ সব শক্তি উৎস। সেই জন্য আমরা মানুষের কাছে গেছি।’

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘কেন আপনারা কেয়ারটেকার সরকার করতে চান না? এটা তো আপনাদের দাবি ছিল। এটা এই জন্য করতে চান না যে, আপনারা এতো অপকর্ম করেছেন ১০টি আসনও পাবেন না। চুরি, চুরি, চুরি- এর কোনো হিসাব নেই, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত। এখানে কেরাণীগঞ্জের অনেক নেতা আছেন। গ্রামের খবর আপনারা জানেন না? যাদের পায়ে চপ্পল ছিল না, তারা এখন বিএমডব্লিউ গাড়ি চালায়। এই হচ্ছে তাদের পরিবর্তনটা।’

তিনি বলেন, ‘শ্রীলংকা খুব খারাপ অবস্থায় পড়েগিয়েছিল, সেখানে একই ধরনের শাসন ব্যবস্থা ছিল। তারা পরিবর্তন করে অতিদ্রুত ভালোর দিকে যাচ্ছে। সেখানে এখন দেশপ্রেমিক শাসকরা আছেন, অর্থনীতিবিদদের তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমাদের এখানে অর্থনীতিবিদদের গুরুত্বই দেন না।’

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ স্বৈরাচারের বাবা। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তির লড়াই করা অত্যন্ত কঠিন। এই ফ্যাসিবাদকে যদি দূর করতে হয়, তরুণদের বুকে অনেক সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে, রাস্তায় নামতে হবে, মৃত্যুকে পরোয়া করলে চলবে না। সবাই মিলে নেমে পড়ুন, এরা পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।’

Comment here