এত সরবরাহ কোথায় গেল - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

এত সরবরাহ কোথায় গেল

মো. মাহফুজুর রহমান : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে গত বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৯২ হাজার টন। সরকারি সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী দেশে পেঁয়াজের মোট সরবরাহ ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার টন। বছরে দেশে চাহিদা ২৪ লাখ টন। বর্তমানে প্রশ্ন-উদ্বৃত্ত ১০ লাখ ৬৬ হাজার টন পেঁয়াজ গেল কোথায়।

ভোক্তাদের অভিযোগ, পাইকারি ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছেন। তবে ভোক্তা অধিকার সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, ভারত বাদে অন্য দেশ থেকে উচ্চমূল্যে পেঁয়াজ আমদানির কারণে সংকটের সৃষ্টি, তাই এখনই দাম কমবে না। এই সংকটের তাৎক্ষণিক প্রতিকার নেই জানিয়ে বাজার স্থিতিশীলতার জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দেন তারা।

এদিকে দেশের সর্ববৃহৎ সম্প্রসারণ সেবাদানকারী সংস্থা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) কর্মকতা দাবি করেছেন, শিগগির দেশি পেঁয়াজ বাজারে আসবে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৩ লাখ ৭৬ হাজার টন, এটিও অর্জিত হবে। তবে কর্মকর্তারা যাই-ই বলুক না কেন, কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না পেঁয়াজের বাজার।ads

এদিকে দাম ভালো পাওয়ায় আগভাগে পেঁয়াজ তুলে ঢাকার বাজারে পাঠাচ্ছেন কৃষকরা। তবে এটি কোনো সমস্যা মনে করছেন না ডিএইর কর্তারা।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক এবং এর কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। একাধিক দেশ থেকে যেহেতু আমদানির ব্যবস্থা করা হয়েছে, তাই দাম কমবে না। কিন্তু দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, কোনো কিছুর দাম আকাশ ছুঁলে সরকার স্বল্পমেয়াদি ‘কুইক ফিক্স’ পলিসি কাজে লাগিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দাম কমিয়ে দেয়। তবে এমন কোনো কুইক ফিক্স আমাদের আছে বলে মনে হয় না। তাই উচিত, সংকট মোচনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন।

গোলাম রহমান বলেন, এর আগে পেঁয়াজের দাম বেড়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পেঁয়াজের বাজার অনেকটাই ভারতনির্ভর। এটি উত্তরণে সরকার দৃশ্যমান এমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি, যেন এ নির্ভরতা কমে। তিনি কৃষককে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে পরামর্শ দেন। এ ছাড়া উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজের বীজ ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যেতে পারে বলে মনে করেন ক্যাব সভাপতি। ক্যাব সভাপতি মনে করেন, মৌসুমের সময় পেঁয়াজ আমদানির ওপর শুল্কারোপ করতে হবে। আবার মৌসুম শেষে শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে, যাতে ভোক্তারা যুক্তিসঙ্গত মূল্যে পেঁয়াজ পান।

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব রেজা সিদ্দীক মনে করেন, পেঁয়াজ যেহেতু পচনশীল শস্য, তাই আধুনিক কোনো প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ বাড়ানো যায় কিনা, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। যদি পেঁয়াজের সংরক্ষণ, উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায়, তা হলে বারবার এ সংকট আসবে না। এ জন্য কৃষককে বীজ, সার এবং ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষক যাতে মৌসুমে ন্যায্যমূল্য পায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

Comment here