এ এস পির মহানুভবতা ও একজন ভিক্ষুকের গল্প - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
লাইফস্টাইল

এ এস পির মহানুভবতা ও একজন ভিক্ষুকের গল্প

মোঃ হুমায়ূন কবির স্টাফ, রিপোর্টার  : বয়স ৭২। শরীর জুড়ে বলিরেখা। কথা অস্পষ্ট। চোখেও দেখেন ঝাপসা। প্রতিদিনের মতো শনিবার সকালে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় প্রচণ্ড রোদের মধ্যে পিচঢালা পথে শুয়ে ভিক্ষা করছিলেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ শান্তি চৌধুরী।

এ সময় যানজট নিরসনে রাস্তায় কাজ করছিলেন গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। হঠাৎ ভিক্ষুক শান্তি চৌধুরীর দিকে চোখ পড়ে তার। এর পরের গল্পটা অন্যরকম। মানবতার। শান্তি চৌধুরীর কাছে এগিয়ে যান শামসুন্নাহার। জানতে চান জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কেন তাকে ভিক্ষা করতে হচ্ছে? বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকেন শান্তি। তারপর একের পর এক বলতে থাকেন জীবনের নানা ঘটনা। বৃদ্ধা শান্তির কথা শুনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এসপি। পরম দরদ ও যত্মে পুলিশের একটি গাড়িতে করে তাকে পাঠিয়ে দেন গাজীপুর সদরের মণিপুর এলাকার গিভেন্সি গ্রুপের প্রতিষ্ঠিত বয়স্ক ও পুর্নবাসন কেন্দ্রে। অবশেষে এই বৃদ্ধার ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। এসপি শামসুন্নাহার পিপিএম, দৈনিক মুক্ত আওয়াজকে, বলেন।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কদুরখালী এলাকার ননী চৌধুরীর স্ত্রী শান্তি চৌধুরী। স্বামী প্রয়াত হয়েছেন অনেক আগে। শান্তি চৌধুরীর অর্থবিত্ত যা ছিল সবকিছু একদিন মেয়ের জামাইকে দিয়ে দেন। শর্ত ছিলো- জীবনের শেষ দিনগুলো যেন শান্তি চৌধুরী মেয়ের কাছে শান্তিতে থাকতে পারেন। কিন্তু সেই শান্তি আর বৃদ্ধা শান্তির কপালে জোটেনি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তার শেষ দিনগুলো কাটছিল পথে শুয়ে ভিক্ষা করে। দ্বিতীয় একটা পক্ষ শান্তিকে দিয়ে ভিক্ষা করাতো। শান্তি চৌধুরী পুলিশকে জানান, তার এক ছেলে। নাম লিটন চৌধুরী। পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে থাকেন তিনি।

প্রায় ১০ বছর আগে একমাত্র মেয়ে বাপ্পী চৌধুরীর স্বামী বাবুল মল্লিককে জমাজমি যা ছিল সব বিক্রি করে টাকা দিয়ে দেন। শর্ত ছিল জীবনের শেষ দিনগুলো তাদের কাছেই থাকবেন। সহায় সম্বল সব নেয়ার পর বাড়ি থেকে শান্তিকে বের করে দেয়া হয়। বেঁচে থাকার তাগিদে গাজীপুর চলে এসে বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি। পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, পিপিএম দৈনিক মুক্ত আওয়াজে, বলেন। এক সময় শান্তি চৌধুরীর সব ছিল। এখন কিছুই নেই। তবে ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাকে জায়গা দেয়নি। জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদুল ইসলাম দৈনিক মুক্ত আওয়াজে বলেন।

পুলিশ সুপারের মহানুভবতায় বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই হয়েছে শান্তি চৌধুরীর। এখন হয়তো তিনি কিছুটা শান্তি পাবেন। পুলিশের গাড়িতে করে শান্তিকে প্রথমে তার কাছে পাঠিয়ে দেন। পরে শান্তি চৌধুরীকে ওই বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে আশ্রয় করে দেন গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার এসপি শামসুন্নাহার, পিপিএম। শান্তি চৌধুরীর মেয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদুল ইসলাম দৈনিক মুক্ত আওয়াজে বলেন। শান্তি চৌধুরীর মেয়েকে জানানো হয়েছে শান্তি চৌধুীরর মেয়ে এসে যদি তাকে নিতে চায় তাহলে নিতে পারবে আর যদি নিতে না চায় তাহলে গাজীপুর সদরের মণিপুর এলাকার গিভেন্সি গ্রুপের প্রতিষ্ঠিত বয়স্ক ও পুর্নবাসন কেন্দ্রেই শান্তি চৌধুরী থাকবেন।

Comment here