কক্সবাজারে ধর্ষণ : পুলিশ দিল নতুন তথ্য - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

কক্সবাজারে ধর্ষণ : পুলিশ দিল নতুন তথ্য

সারওয়ার আজম মানিক,কক্সবাজার : পর্যটননগরী কক্সবাজারে আসা নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি পুলিশের। সেই সঙ্গে ঘটনা তদন্তের স্বার্থে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে জিয়া গেস্ট ইন হোটেল ম্যানেজার রিয়াজুদ্দিন ছোটনকে। এদিকে পুলিশের তদন্তে ভিকটিমের বিষয়ে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য। অনৈতিক কাজের অভিযোগে এ বছরের শুরুতেই তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোন থেকে। ওই নারীও আদালতে ১৮ পৃষ্ঠার জবানবন্দি দিয়ে তুলে ধরেছেন নিয়মিত কক্সবাজার আসার কারণ।

কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের এসপি জিল্লুর রহমান জানান, নারী পর্যটককে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হোটেল ম্যানেজার ছোটনকে তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। তাই কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামীমুন তানজিনের আদালতে আসামিকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত শুনানি শেষে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আরও জানান, মামলাটির তদন্ত গুরুত্বসহকারে নেওয়া হচ্ছে। ধর্ষণের ঘটনায় শনাক্ত মূল আসামি আশিক বাবু জয়সহ যারা জড়িত, তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। আবার ওই নারীর ব্যাপারেও নানা রকম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো খুব যত্নসহকারে যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ওই নারী গত ৮ জানুয়ারি কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোন থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিল। তখন তার নাম দেওয়া হয়েছিল সানজিদা। অনৈতিক কাজের অভিযোগে গ্রেপ্তার ওই নারীকে পরদিন আদালতে পাঠানো হয়েছিল। তখন ধারণ করা একটি ছবিও পাওয়া গেছে। এসপি জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পুলিশের হাতে এসেছে। আমরা চাই আসল ঘটনা উৎঘাটিত করার মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক।’

এর আগে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হামীমুন তানজীনের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ভিকটিম। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক রুহুল আমিন এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আদালতকে ওই নারী জানান, আট মাস বয়সী অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসায় অর্থ জোগাড় করতে স্বামীসহ তিনি কক্সবাজারে এসেছেন। তার সন্তানের হার্টে ছিদ্র রয়েছে। এর চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। সন্তানকে বাঁচাতে টাকা জোগাড় করাই ছিল তার লক্ষ্য। কিন্তু সেই পথকে মসৃণ হতে দেয়নি সন্ত্রাসীরা। নিয়মিতই চাঁদা দাবি করে। বাধ্য হয়ে একবার ১০ হাজার টাকা চাঁদা দেন। পরে আবার চাঁদা চাইতে গেলে স্বামীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বাগবিত-া হয়। এর সূত্র ধরেই তাকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে।

সেই জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সন্তানকে বাঁচানোর জন্য টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অনৈতিক কাজে জড়ান বলে আদালতকে জানিয়েছেন ওই নারী। কলাতলী এলাকায় সি ল্যান্ড নামে একটি গেস্ট হাউসে সন্ত্রাসী আশিকুল ইসলামের সঙ্গে তার পরিচয় হয় ঘটনার দুদিন আগে সোমবার সকালে। ওইদিন আশিক তার কাছে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। বাধ্য হয়ে তাকে ১০ হাজার টাকা দেন ওই নারী। কিন্তু আরও টাকা দাবি করলে তার স্বামী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বাগবিত-ায় জড়ান। এ কারণে ওই নারীকে বুধবার রাত ৮টার দিকে কলাতলী লাইট হাউস এলাকার একটি কটেজের সামনে থেকে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় আশিক।

জবানবন্দিতে ওই নারী জানান, সৈকত পোস্ট অফিসের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে আশিকের দুই বন্ধু ভিকটিমকে ধর্ষণ করে। এর পর আশিক আবার তাকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় কলাতলীর জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের একটি কক্ষে। সেখানে ইয়াবা সেবন করে ধর্ষণের একপর্যায়ে একটি ফোন কলে পুলিশের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে আশিক কক্ষ থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়।

তবে এর আগে বৃহস্পতিবার ওই নারী অভিযোগ করেছিলেন, সৈকতের লাবনী পয়েন্টে তারা বুধবার বিকালে বেড়াতে যান। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথাকাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজি অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি সিএনজি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তারা। এর পর তাকে জিয়া গেস্ট ইনে আবার ধর্ষণ করে ওই তিন যুবক। আর সেই ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরে র‌্যাব এসে তাকে উদ্ধার করে।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভিকটিমের স্বামী। আলোচিত এ মামলার আসামিরা হলো- আশিকুর রহমান ও তার তিন সহযোগী ইস্রাফিল হুদা ওরফে জয়, মেহেদী হাসান ওরফে বাবু এবং হোটেল ম্যানেজার রিয়াজুদ্দিন ছোটন। এদের মধ্যে আশিকের নামে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ ১৭টি এবং জয়ের নামে দুটি মামলা রয়েছে। মামলার তদন্ত করছে টুরিস্ট পুলিশ।

 

Comment here