করোনায় বাস আর ট্রেনের মতো লঞ্চেও যাত্রীর সংখ্যা অনেকে কমে গেছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় শতকরা ৭০ ভাগ যাত্রী কমেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন ঢাকা থেকে ৮০টি লঞ্চ ছেড়ে যেত, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০টিতে। লঞ্চ মালিক সমিতি বলছে, করোনায় যাত্রীর সংখ্যা কমার কারণে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়েছে। যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় লঞ্চের মালিকেরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল টানা ৬৬ দিন। ২৮ দিন ধরে আমরা লঞ্চ চালাচ্ছি, কিন্তু যাত্রীর সংখ্যা অনেক কম। অধিকাংশ লঞ্চের কেবিন থাকছে ফাঁকা। ডেকেও সেভাবে যাত্রী নেই। যে পরিমাণ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচল করছে, তাতে তেলের খরচই উঠছে না। যাত্রী কমার কারণে বেশ কয়েকটি লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কত দিন এভাবে চালাতে পারব, সেটি জানি না। লঞ্চের মালিকেরা বিপদে রয়েছেন।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক দৈনিক মুক্ত আওয়াজকে বলেন, করোনার কারণে লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম যাত্রী লঞ্চে যাতায়াত করছে। যাত্রী কমার কারণে অনেক রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। করোনার কারণে মানুষ যাতায়াত করছে কম। তবে বাস-ট্রেনের তুলনায় লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি।
লঞ্চের কেউই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না
লঞ্চের যাত্রী কিংবা লঞ্চের কর্মচারী কেউই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। বিআইডব্লিউটিএর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে অনেক যাত্রী মাস্ক ছাড়া ঘাটে প্রবেশ করছে। লঞ্চগুলো স্যানিটাইজ না করে যাত্রীদের লঞ্চে তুলছে। যাত্রীদের কেউই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসছে না কিংবা লঞ্চের কর্মচারীরা যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে নজরদারিও করছেন না। সদরঘাটের লঞ্চে লঞ্চে অবস্থান নিয়েছেন হকাররা।
লঞ্চের যাত্রীরা যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে না, তা স্বীকার করেন বিআইডব্লিউটিএর পরিদর্শক শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন পরিবহন পরিদর্শক ও দুজন সারেং। বিআইডব্লিউটিএর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, লঞ্চের যাত্রীরা মোটেও সচেতন নয়। তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। গত ৩১ মে থেকে লঞ্চ চলাচল শুরুর পর থেকে বহুবার মাইকিং করে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ন্যূনতম শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু যাত্রীরা কথা শুনছে না।
যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে লঞ্চের ডেকগুলোয় দাগ টেনে দেওয়া হয়েছিল। সরেজমিন আজ রোববার দুপুরে দেখা গেল, কোনো লঞ্চের যাত্রী ওই সীমানার মধ্যে বসছে না। এমনকি লঞ্চের ভেতর যাত্রীদের বেশির ভাগই মাস্কও পরছে না। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা নজরদারিও করেন না কিংবা লঞ্চের লোকজনও কোনো পদক্ষেপ নেন না। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দেখা গেল, ঢাকা-মনপুরা-হাতিয়া রুটের এমভি ফারহান-৬ লঞ্চে কোনো যাত্রীকে স্যানিটাইজ করা হচ্ছে না। গাদাগাদি করে তারা লঞ্চে ঢুকছে। অন্যদিকে সদরঘাট লঞ্চঘাটে প্রবেশপথে যে পাঁচটি জীবাণুনাশক টানেল বসানো হয়েছিল, তা নষ্ট হয়ে গেছে। যাত্রীরা যে যার মতো লঞ্চঘাটে প্রবেশ করছে।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, ‘টানা ৬৬ দিন বন্ধ ঘোষণার পর আমরা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। তখন লঞ্চের যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য মাইকিংসহ নানা কর্মসূচি হাতে নিই। অনেক চেষ্টা করেও যাত্রীদের মধ্যে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা সম্ভব হয়নি।’ তিনি বলেন, লঞ্চের যাত্রীরা যাতে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সে জন্য আবার পদক্ষেপ নেবেন। শিগগির তিনি সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল পরিদর্শন করবেন। বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comment here