নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জনসমাগম এড়াতে ঘরেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের যেসব দেশে এ ভাইরাসের দ্রুত বিস্তার ঘটছে, সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির দোকান ছাড়া আর সব দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অফিস, আদালত তো বটেই, অনেক ক্ষেত্রে ধর্মীয় উপসনালয়ও বন্ধ রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। বলা হচ্ছে, সীমিত আকারে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে। বিশিষ্টজনরা বলছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিজেকে ও পরিবারকে এবং গোটা দেশকে রক্ষায় নাগরিকদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। ঘরেই থাকতে হবে।
করোনা ভাইরাস মারাত্মকভাবে ছড়িয়েছে বা ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে এমন দেশগুলোয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে গত বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে লকডাউন। পুরো ইউরোপ কার্যত লকডাউনে বন্দি। যুক্তরাষ্ট্রও কার্যত অচল। এশিয়ার অনেক দেশও লকডাউন শুরু করেছে। কারফিউ জারি হয়েছে শ্রীলংকায়। বাংলাদেশে লকডাউন শব্দটি ব্যবহার না করা হলেও কার্যত সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে ঘরে থাকার কথা বলা হচ্ছে।
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বাড়তে থাকায় এখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী কাজ করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অহেতুক ঘরের বাইরে বের হওয়ায় পুলিশের লাঠিপেটা, কান ধরে ওঠবস করানোর ঘটনা ঘটছে। এতে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি যশোরে তিন বৃদ্ধকে কান ধরানোয় তীব্র সমালোচনার মুখে প্রত্যাহার করা হয় মনিরামপুরের এসিল্যান্ডকে। কিন্তু এর পরও সামজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিশিষ্টজনরা। তারা মনে করেন, এ দুর্যোগ মুহূর্তে বৃহত্তর স্বার্থে কঠোর হতেই হবে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিতে যারা কাজ করছেন তাদের আরও পেশাদারিত্ব ও সহনশীলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
দৈনিক মুক্ত আওয়াজ পত্রিকা সম্পাদক এম ফাহিম ফয়সাল স্মরণ বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ইউরোপজুড়ে লাশের মিছিল। এমন অবস্থায় বাংলাদেশেও এই মাহমারী নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি মানুষকে বলব, ঘরে থাকুন, ধৈর্য ধরুন। সামজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য যা যা করার দরকার তা করতে হবে। কিছু জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কাজে বাড়াবাড়ির কথা আসছে, সেটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। মানুষকে শাস্তি না দিয়ে বুঝিয়ে ঘরে রাখতে হবে। অবশ্য বাংলাদেশের মানুষ সহজে বুঝতে চায় না। বিশ্বেও অন্য অনেক দেশে এর থেকেও কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে। প্রশাসনকে সহনশীলতার সঙ্গে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে আমাদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় যে দৈন্যতা, তা এখন বোঝা যাচ্ছে। সরকারের উচিত হবে এখন চিকিৎসা খাতে নজর দেওয়া।
ঘরের বাইরে হওয়া মানুষকে শাস্তি দেওয়া দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, আমরা মনে হয় ভুলে যাচ্ছি, নাগরিক হলেন এ দেশের মালিক। অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন হলেন নাগরিকদের সেবক। তাই সেবকের কাজ হলো দেশের মালিক নাগরিকদের যথাযথ সম্মান রক্ষা করে তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বিধান করা এবং নাগরিকদের মর্যাদাহানি হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকা।
তবে তিনি বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। তাই আমাদের সবার উচিত সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া। সামজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলা। এ সংকটময় পরিস্থিতিতে আমরা সবাই যেন সচেতন থাকি, নিরাপদ থাকি, সুস্থ থাকি।
Comment here