কর-ভ্যাট পরিবর্তনে বাড়বে রডের দাম - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
জাতীয়

কর-ভ্যাট পরিবর্তনে বাড়বে রডের দাম

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) হার পরিবর্তনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা কার্যকর হলে প্রতিটন রডের দাম কমপক্ষে ৭ হাজার ৫০০ টাকা বেড়ে যাবে। এ ছাড়া আয়কর হার পরিবর্তনেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রডের দামের ওপর। নির্মাণ খাতের এ প্রধান উপকরণটির দাম বাড়লে নির্মাণশিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ৩৬০০ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিএসআরএম গ্রুপের ডিএমডি তপন সেন গুপ্ত আমাদের সময়কে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবর্তন না হলে প্রচ- চাপে পড়বে রডশিল্প। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে রড। এমন অবস্থায় বর্তমানে বিদ্যমান ভ্যাট ও করের হার বহাল রাখা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে দেখা করে তাদের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। এ সময় তারা ভ্যাট ও করের বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন। বিষয়টি এনবিআর ইতিবাচকভাবে দেখবেন বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ইস্পাতশিল্পে ভ্যাট ও করহার পরিবর্তনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে শুধু ইস্পাত শিল্পই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, সামগ্রিক অর্থনীতিতেই তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, ভ্যাট ও করহার পরিবর্তনের কারণে রডের দাম কমপক্ষে প্রতিটন ৭ হাজার ৬০০ টাকা বাড়বে। এতে ব্যক্তি ও সরকারি পর্যায়ে নির্মাণব্যয়ও বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, দালান বা পাকা বাড়ি নির্মাণের সময় মানুষ প্রথমে কেনে রড। তাই রডের দাম বেড়ে গেলে বাড়ি নির্মাণে তাদের আগ্রহ কমে যাবে। তাই দাম বাড়লে শুধু রডের চাহিদাই কমবে না, নির্মাণ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপকরণের চাহিদাও কমে যাবে। তাতে একদিকে দেশের মানুষ মানসম্মত আবাসন ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হবে, যা তার মৌলিক অধিকার। অন্যদিকে এর ফলে নির্মাণশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৩৬০০ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান জহির এইচ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ইস্পাত হচ্ছে অবকাঠামো নির্মাণের প্রধান উপকরণ ও উন্নয়নের প্রতীক। এ কারণে বিশ্বব্যাপী এই শিল্পকে রাষ্ট্র নানাভাবে প্রণোদনা দিয়ে থাকে। আমাদের দেশেও এত দিন সরকার এই শিল্পকে কিছু সুরক্ষা দিয়ে এসেছে। আমরা সরকারকে অনুরোধ জানাই, অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এই সুরক্ষা যেন বহাল রাখা হয়।

জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিটন স্ক্র্যাপ তথা পুরনো লোহাজাত পণ্যে ৩০০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে নির্ধারিত ভ্যাটের এই বিধান প্রত্যাহার করে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে প্রতিটন স্ক্র্যাপে ন্যূনতম ভ্যাটের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ হাজার ৭৫০ টাকা, যা বর্তমানের চেয়ে ১ হাজার ৪৫০ টাকা বেশি। কোনো কারণে স্ক্র্যাপের দাম বাড়লে ভ্যাটের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। একই ভাবে বর্তমানে প্রতিটন বিলেট বিক্রির ওপর ৪৫০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়। এটি বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ঘোষিত বাজেটে। এ ছাড়া এমএস রড বিক্রির ওপরও ভ্যাটের পরিমাণ ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। খুচরা বিক্রির পর্যায়ে ভ্যাট ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে এ খাতে ভ্যাটের পরিমাণ ১ হাজার ৪০০ টাকা, যা প্রস্তাবিত বাজেটে ৯ হাজার ৫০ টাকা করা হয়েছে। এতে প্রতিটনে ন্যূনতম ব্যয় বাড়বে ৭ হাজার ৬৫০ টাকা। শুধু ভ্যাটেই নয়, অগ্রিম আয় করে যে পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি কার্যকর হলেও রডের মূল্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বর্তমানে স্ক্র্যাপ কেনায় কোনো আয়কর দিতে হয় না। ঘোষিত বাজেটে প্রতিটনে ১ হাজার ৫০ টাকা আগাম আয়কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

একইভাবে বিলেটের ওপর ১ হাজার ৬৫০ টাকা অগ্রিম আয় করের প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে বিলেট বিক্রিতেও কোনো আয়কর দিতে হয় না। বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ইস্পাতশিল্পে বর্তমান সরকার গত ১০ বছর ধরে যে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে, তা বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়েছে। সংগঠনটি প্রতিটন স্ক্র্যাপ ভ্যাটের পরিমাণ ২ হাজার টাকার পরিবর্তে ৭৫০ টাকা নির্ধারণের দাবি করেছে। একইভাবে বিলেট থেকে প্রস্তুত এমএস পণ্যের (মাইল্ড স্টিল) ভ্যাটও ২ হাজারের পরিবর্তে ৭৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।

Comment here