কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য দেখতে পঞ্চগড়ে ছুটছেন পর্যটক - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য দেখতে পঞ্চগড়ে ছুটছেন পর্যটক

এস কে দোয়েল,তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) : উত্তরের মেঘমুক্ত আকাশে হাসছে শ্বেতশুভ্রের কাঞ্চনজঙ্ঘা। কখনো মেঘের আড়াল থেকেই উঁকি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের। চলতি মাসে তিন-চারদিন অল্প সময়ের জন্য দেখা মিলেছে তার। তবে আজ ভোর থেকেই আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছেন পর্যটকরা।

এমনিতে কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈসর্গিক রূপ দেখতে প্রতিদিনই পঞ্চগড়ে ছুটছেন পর্যটকরা। পর্যটকের সমাগমে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে জেলাটিতে।

আজ ভোরে তেঁতুলিয়া উপজেলার পর্যটন স্পট ডাকবাংলো পিকনিক কর্নারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী পর্যটকরা বিমুগ্ধ হয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপমাধুর্য উপভোগ করছেন। তাদের কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুবান্ধব নিয়ে। আর এসেই মহানন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ডাকবাংলোয় দাঁড়িয়ে স্মার্টফোনে ধারণ করছেন কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য। যা সেলফি, ছবি এবং ভিডিও হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুকে।

কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য দেখতে আসা ফিরোজ-মিথিলা দম্পতি বলেন, ‘আমরা রংপুর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে তেঁতুলিয়ায় এসেছি। অনলাইনে দেখেছি, তেঁতুলিয়া থেকে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বত দেখা যায়। অবশ্য গত সাতদিন কুয়াশা থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য দেখা যায়নি। আমরা আজ সকালে এসেই দেখতে পেয়েছি। নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছি; এখানকার পরিবেশ এত সুন্দর তা না এলে হয়তো বুঝতে পারতাম না। মনে হচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘার আরও কাছে যাই। এতটাই লোভ লাগছে।’

রাজশাহী থেকে আসা ফাতেমাতুজ্জোহরা সিনথি বলেন, ‘কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার অপেক্ষা ছিল অনেকদিনের। যদিও অসুস্থ্, তারপরেও পরিবার নিয়ে এসেছি। আমরা জানতে পেরেছি কাঞ্চনজঙ্ঘা সকালে এক রূপ ধারণ করে, দুপুরে আরেক রূপ। আসলে পঞ্চগড়টা অনেক সুন্দর।’

একই কথা বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে নেপালেই আছি। পাহাড়, নদীর সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে।’

কাঞ্চনজঙ্ঘা সৌন্দর্যে মুগ্ধ পর্যটকরা

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা নুসরাত জাহান বলেন, ‘কিছুদিন ধরেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসতে চাচ্ছি। কিন্তু গত কয়েকদিন তার দেখা মেলেনি। আজ সকালে খালি চোখে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়ে খুব আনন্দিত হয়েছি। দেশের মাটি থেকে যে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেরেছি, এতে খুব ভালো লাগছে।’

রংপুর থেকে আসা ইব্রাহিম রাজ বলেন, ‘আমরা দুই বন্ধু রংপুর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছি। গতকাল দেখতে পারিনি। আজ ভোরে দেখতে পেয়ে যে আনন্দ পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। তবে সবচেয়ে ভালো হতো যদি ফ্যামেলি মেম্বার নিয়ে আসতাম।’ এ ছাড়াও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার অনুভূতি প্রকাশ করেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বেশ কয়েকজন পর্যটক।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সময়টায় খুব কাছ থেকে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার। এ বছর ঈদ-ই মিলাদুন্নবী ও পূজার ছুটিতে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছিল। কিন্তু তখন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা না যাওয়ায় অনেকে হতাশা নিয়ে ফিরে গেছেন।

এ অঞ্চল থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে তুষারাচ্ছাদিত শ্বেতশুভ্র হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার, এভারেস্ট শৃঙ্গের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার, ভুটানের দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার, চীনের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার, ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৮ কিলোমিটার, শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮ কিলোমিটার আর কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র (আকাশ পথে) ১১ কিলোমিটার।

ফলে মেঘমুক্ত নীল আকাশের নিচে তাকালে দেখা যায় চোখের সামনেই সাদা পাহাড়। ভোরের আকাশে বরফাচ্ছাদিত নয়নাভিরাম পর্বতটি বেশ উপভোগ্য। কখনও তা রূপালী চকচকে রূপ ধারণ করে। এ ছাড়াও এখানে সন্ধ্যায় দেখা মেলে দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলের। কাঞ্চনজঙ্ঘার মাঝে যে কালচে পাহাড়টা দেখা যায় সেটিই দার্জিলিং। আর সন্ধ্যায় তেঁতুলিয়ায় মহানন্দার তীরে দাঁড়িয়ে উত্তরের পাহাড়ের দিকে তাকালে যেসব আলো দেখা যায়, সেটি শিলিগুড়ি শহরের।

ট্যুরিস্ট পুলিশ পঞ্চগড় জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সারা বছরই পর্যটকের সমাগম ঘটে থাকে এখানে। বিশেষ করে এ সময়টাতে হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে প্রচুর পর্যটক এসে থাকে। এবারও পর্যটকরা আসছেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়াও তারা এখানকার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখছেন। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে ট্যুরিস্ট ও থানা পুলিশসহ প্রশাসন তৎপর রয়েছে।’

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘প্রতি বছর হেমন্ত-শীত ঋতুতে কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ দেখতে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা। আমরা কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের তীর্থস্থান তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোয় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থাপনা নির্মাণ করেছি। পর্যটকদের বসার জন্য গ্যালারি করা হয়েছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা সহজে দেখার জন্য ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন রেস্ট হাউজ আমরা প্রস্তুত রেখেছি।‘

 

Comment here