কাল ইসির অগ্নিপরীক্ষা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

কাল ইসির অগ্নিপরীক্ষা

আগামীকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু ভোটের অঙ্গীকার করে আসছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও এ বিষয়ে তাগাদা ছিল। আওয়ামী লীগ ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি দল ভোটে অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলটির অনেক নেতাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। কিন্তু বিএনপিসহ সমমনা ১৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ভোট বর্জন করেছে। সেই অর্থে আসন্ন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়াই এখন ইসির জন্য অগ্নিপরীক্ষা। পাশাপাশি ভোটারদের আস্থা অর্জনও ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এরই মধ্যে নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ভবনের নিরাপত্তা জোরদার এবং নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে ইসি।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগে. জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, রাতের ভোটের ব্যাপারে যে পারসেপশন (উপলব্ধি) তৈরি হয়েছে, সেটা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সম্প্রতি সরকারি দলের অনেকে প্রকারান্তরে সেটা স্বীকারও করছেন। তিনি বলেন, বড় একটি দলের বর্জনের মুখে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য ও সহিংসতামুক্ত রাখাই ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। দায়িত্বগ্রহণের পর সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে এ কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় কয়েক দফা সংলাপেরও আয়োজন করে। কিন্তু তাতে সায় দেয়নি বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। তাদের পক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। অন্যদিকে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে তাগাদা দেওয়া হয়।

এসবের মধ্যেই গত ১৪ সেপ্টেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে ইসি। রোডম্যাপে ১৪টি চ্যালেঞ্জ এবং এগুলো মোকাবিলায় ১৯ দফা কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা দেয় সাংবিধানিক সংস্থাটি।

চ্যালেঞ্জসমূহ

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি; নির্বাচনের দায়িত্বে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন; ব্যবহৃত ইভিএমের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টি; অর্থ ও পেশীশক্তির নিয়ন্ত্রণ; নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখা; সকল রাজনৈতিক দল কর্তৃক নির্বাচনী আচরণবিধি অনুসরণ; নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে বিপক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক-পুলিশ-প্রশাসন কর্তৃক কোনোরকম বাধার সম্মুখীন না হওয়া; জালভোট, ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই রোধ; প্রার্থী-এজেন্ট-ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে অবাধ আগমন এবং ভোটারদের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীকে ভোট প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি; নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান; পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং নির্বাহী-জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিতকরণ এবং নিরপেক্ষ দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োজিতকরণ।

এর মধ্যে আর্থিক সংকটের কারণে ইভিএম থেকে সরে যায় ইসি। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার দাবিতে ভোট বর্জন করে বিএনপি এবং এর মিত্র দলগুলো। গত ১৫ নভেম্বর ঘোষিত তফসিলে ২৮টি দল ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে। দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নমনীয়তায় জমে উঠেছে নির্বাচনী আবহ। আওয়ামী লীগ মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনাও ঘটছে। প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ও প্রমাণসাপেক্ষে দুই নৌকা প্রার্থীকে ইসিতে ডেকে জরিমানা করা হলেও কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়নি ইসি। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করলেও তা আদালতের নির্দেশে ফেরত আসে। ভোটের একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটে আগের রাতেই ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে এবারের ভোটে ৯৩ শতাংশ কেন্দ্রে সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে। এখন কেন্দ্রে কেন্দ্রে পেশিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে সুষ্ঠু ভোটানুষ্ঠানই ইসির বড় চ্যালেঞ্জ।

ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করাও চ্যালেঞ্জের

ভোটদানের হার বাড়ানোর বিষয়টিকেও ইসি ও সরকারি দলের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। বিএনপিসহ ১৬টি দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ভোটারদের আগ্রহে ভাটা পড়তে পারে। পাশাপাশি বিরোধী দলের ভোট বর্জন এবং ভোটগ্রহণকালে ডাকা হরতালে ভোটের পরিবেশ সহিংস হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হতে পারে সাধারণ ভোটারদের মাঝে। তা ছাড়া সাধারণ ভোটারদের মাঝে নির্বাচনকে ‘একতরফা’ মনে হতে পারে। এসব আশঙ্কা থেকে ভোটারদের মুক্ত করে কেন্দ্রমুখী করাটাও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, বিএনপি ও তাদের মিত্রদের বর্জনে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৩শ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় ভোট হয়নি। আর ভোট হওয়া ১৪৭টি আসনে ৪০ শতাংশেরও কম ভোট পড়েছিল। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় পড়েছিল মাত্র ২২ শতাংশ।

কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্র, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ভবনের নিরাপত্তা জোরদার এবং নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে ইসি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমানের সই করা চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনায় মোট ৪২ হাজার ২৪টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, সম্পাদক বা অনুরূপ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষের সঙ্গে সভা করে বা যোগাযোগের মাধ্যমে অথবা দায়িত্ব দিয়ে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে।

Comment here