কী হয়েছিল সেই রাতে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

কী হয়েছিল সেই রাতে

মোঃ হুমায়ূন কবির, ব্যুরো প্রধান গাজীপুর : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার এলাকায় আলোচিত প্রবাসী রেজোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ও তিন সন্তানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের জড়িত সন্দেহে আরও পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে  র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যার-১)।

জড়িতরা র‌্যাবের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে, তারা সবাই মাদকসেবী। প্রবাসীর ঘরে চুরির ঘটনায় তাদের চিনে ফেলায় তার স্ত্রী ও দুই মেয়েকে ধর্ষণ ও ছেলেসহ সবাইকে হত্যা করে তারা।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, শ্রীপুর উপজেলার আবদার এলাকার মো. কাজিম উদ্দিন (৫০), একই গ্রামের মো. বশির (২৬), সুনামগঞ্জের গাবি গ্রামের মো. হানিফ (৩২), ময়মনসিংহের ফকির পাড়া গ্রামের মো. হেলাল (৩০) এবং সুনামগঞ্জের কাঠালবাড়ি গ্রামের মো. এলাহি মিয়া (৩৫)।

র‌্যাব জানায়, গত ২৩ এপ্রিল শ্রীপুর উপজেলার আবদার এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাড়ির দ্বিতীয় তলায় মালয়েশিয়া প্রবাসী কাজলের স্ত্রী স্মৃতি ফাতেমাসহ ওই দম্পতির মেয়ে সাবরিনা সুলতানা ওরফে নূরা (১৬), হাওয়ারিন (১৩) এবং ছেলে ফাদিলের (৮) গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ২৪ এপ্রিল গৃহবধূর শ্বশুর আবুল হোসেন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে শ্রীপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

এই ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব-১। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শ্রীপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদস্যরা।

পরে গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যমতে, ওই প্রবাসীর ফ্ল্যাট থেকে লুটকৃত মালামাল ও আসামিদের পরিধেয় রক্তমাখা কাপড়, নগদ ৩০ হাজার টাকা, একটি হলুদ রংয়ের গেঞ্জি, জিন্স প্যান্ট, তিনটি লুঙ্গি এবং একটি আংটি উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথাও স্বীকার করেছে বলে জানায় র্যাব।

গ্রেপ্তার কাজিম উদ্দিন রিকশাচালক, হানিফ শ্রমিক, বশির অটোরিকশাচালক, হেলাল ভাঙ্গারি বিক্রেতা এবং এলাহি মিয়া শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তারা প্রত্যেকেই মাদকসেবী। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ নানাবিধ অপরাধের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত তারা। এরা সবাই জুয়াড়ি এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার প্রবাসীর স্ত্রী যে এলাকায় থাকতেন, তাদের বাড়ি সংলগ্ন স্থানে নিয়মিত মাদক সেবন করতো ও আড্ডা দিতো।

র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া কাজিম উদ্দিনের ছেলে পারভেজ আনুমানিক দেড় মাস আগে সন্ধ্যার দিকে গোপনে স্মৃতি ফাতেমার বাসায় খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় ধরা পড়েছিল। সে ধর্ষণসহ হত্যা মামলার আসামি।

প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তান ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৫ আসামি

 

যা হয়েছিল সেই রাতে

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত পাঁচ আসামি জানায়, হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে তারা জানতে পারেন, প্রবাসী কাজল মালয়েশিয়া থেকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ২০-২২ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। এমন খবরের ভিত্তিতে ঘটনার ৫-৭ দিন আগে গ্রেপ্তারকৃত কাজিম ও হানিফ কাজলের বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। পরে অন্য আসামি বশির, হেলাল, এলাহি এবং অন্যদের ডেকে নিয়ে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। দলে কাজিমের ছেলে পারভেজও ছিল।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ২৩ এপ্রিল ফাতেমাদের ফ্ল্যাট বাড়ির পেছনে একত্রিত হয় তারা সবাই। রথমে পারভেজ ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়ির ভেতর ঢোকে। হানিফ মাদারগাছ ও পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে সিড়ির দরজা খুলে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। পরে অন্যদের প্রবেশের জন্য ওই বিল্ডিংয়ের পেছনের ছোট গেট খুলে দেওয়া হয়। কাজিম, হেলাল, বশির, এলাহিসহ ডাকাত দলটি পেছনের গেট দিয়ে বাড়ির ভেতর ঢোকে।

পরে কাজিম এবং হেলালসহ তিনজন প্রথমে ফাতেমার ঘরে ঢুকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে মালয়শিয়া থেকে পাঠানো টাকাগুলো দিতে বলে। ফাতেমা এত টাকা নেই বলে জানায় এবং তার রুমের স্টিলের শোকেসের উপর রাখা টেলিভিশনের নিচ থেকে ৩০ হাজার টাকা বের করে দেন। তারা ফাতেমার স্বণার্লংকারগুলো ছিনিয়ে নেয় এবং পালাক্রমে ধর্ষণ করে।

একই সময় অন্য ঘরেও লুটতরাজ চালায় কাজিমবাহিনী। আসামি বশির ও এলাহিসহ আরেকজন ফাতেমার মেয়ে নুরাকে তাদের হাতে থাকা ধারাল অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে গলার চেন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। তাকেও ধর্ষণ করে আসামিরা। একইভাবে ফাতেমার ছোট মেয়ে হাওয়ারিনকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে তারা। কাজিমের ছেলে পারভেজও তার বাবা ও সহযোগীদের সঙ্গে ধর্ষণে অংশ নেয়।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা র‌্যাবকে আরও জানায়, ফাতেমা ও তার মেয়েরা তাদের কয়েকজনকে চিনে ফেলে। তাই পুরো পরিবারকেই তারা হত্যা করে। ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও গলাকেটে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।

র‌্যাব-১ জানায়, প্রবাসী কাজলের স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও কয়েকজন সক্রিয় সহযোগীর সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আসামিরা তথ্য দিয়েছে।

Comment here