নিজস্ব প্রতিবেদক : মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশে এবার দুর্গাপূজা পালন করা হবে সীমিত পরিসরে। প্রতিবারের মতো মন্দিরে আলোকসজ্জা, বিশেষ সাজসজ্জা, মেলা, আরতি প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হবে না। মন্দিরে রাত নয়টার মধ্যে বন্ধ হবে পূজার সকল কার্যক্রম। এ ছাড়া রাজধানীর কোনো মণ্ডপে কুমারীপূজাও অনুষ্ঠিত হবে না।
আজ শনিবার রাজধানীতে ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা। তারা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুবই অল্প পরিসরে এবার পূজা উদযাপন করা হবে।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী। এ সময় পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত জানান, সারা দেশে এবার দুর্গাপূজায় কোনো উৎসব হবে না। সীমিত পরিসরে হবে পূজার কার্যক্রম। জনসমাগম পরিহার করতে প্রসাদ বিতরণও করা হবে না। এছাড়া হবে না বিজয়ার শোভাযাত্রা। পূজায় করোনাভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পেতে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
মিলন কান্তি দত্ত আরও বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে এ বছর ঢাকায় কোনো মণ্ডপে কুমারী পূজা উদযাপন করা হবে না। তবে ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গায় কুমারী পূজা হতেও পারে।’
শনিবার মতবিনিময় অনুষ্ঠান উপস্থিত ছিলেন, পূজা উদ্যাপন পরিষদের ঢাকা মহানগর সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, জে এল ভৌমিক, পূরবী মজুমদার, সুভাষ বিশ্বাস প্রমুখ।
সভায় নির্মল কুমার চ্যাটার্জী বলেন, ‘করোনা অতিমারির কারণে এবার উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে হবে, বিধায় এবারের দুর্গোৎসবকে ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সপ্তমী তিথিতে বিশ্ববাসীর করোনামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে করা হবে প্রার্থনা। জনসমাগমের কারণে সাস্থ্যবিধি যাতে ভঙ্গ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
পরিষদের নেতারা জানান,এবার মহালয়া ছিল ১৭ সেপ্টেম্বর। কিন্তু পঞ্জিকার হিসেবে এবার আশ্বিন মাস ‘মল মাস’ (অশুভ মাস)। এ কারণে দেবীর পূজা হবে কার্তিকে। পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন, পরদিন সপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গোৎসবের মূল অনুষ্ঠান। ২৬ অক্টোবর মহাদশমীতে হবে বিসর্জন। এর মাধ্যমে শেষ হবে দুর্গাপূজার আচার আনুষ্ঠানিকতা।
পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী বলেন, ‘এবার যেসব জায়গায় সরাসরি অঞ্জলি হবে, সেখানে ২৫ থেকে ৫০ জনের বেশি আসতে পারবেন না। সন্ধ্যা আরতির পর রাত ৯টার মধ্যে অবশ্যই পূজা মণ্ডপ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভক্তিমূলক গান ছাড়া অন্য কোনো রকম গান বাজানো যাবে না। কোনো আতশবাজি বা পটকার ব্যবহার করা যাবে না।’
সন্ধ্যার মধ্যেই আরতি সম্পন্ন করে দর্শনার্থীদের মন্দিরে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। মন্দিরে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা প্রবেশের ব্যবস্থা থাকবে। সামাজিক দূরত্ব মেনে, মাস্ক ব্যবহার করে ভক্তরা অঞ্জলি দিতে পারবেন। বিজয়া দশমী হবে ২৬ অক্টোবর, তবে এবার বিজয়ার শোভাযাত্রা হবে না। মন্দিরগুলো তাদের নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা করবে।
নেতারা জানান, সারা দেশে মোট ৩০ হাজার ২৩১টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর পূজা হয়েছিল ৩১ হাজার ৩৯১টি। তারা মনে করেন, করোনা ভাইরাসের কারণে পূজার সংখ্যা কমেছে।
Comment here