কোটিপতি বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে হত্যা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ক্রাইম

কোটিপতি বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে হত্যা

কোটিপতি বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকার বসুন্ধরা এলাকার প্রকৌশলী আবদুল কাইয়ুমকে (৩২) হত্যা মামলার একমাত্র আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদস্যরা। প্রকৌশলীকে হত্যার এক মাস পর গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

গ্রেপ্তার আঞ্জুমান ওরফে আঞ্জু (২৫) টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার মীর দেওহাটা এলাকার বাসিন্দা।

র‌্যাব-১-এর কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, কিশোর বয়সে কাইয়ুম তার টাঙ্গাইলের খালার বাড়ি বেড়াতে গেলে সেখানকার বাসিন্দা আঞ্জুর সঙ্গে পরিচয় হয়। ছোটবেলা থেকে কিশোর কাল্পনিক চরিত্র ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের বই পড়ে ঢাকার বসুন্ধরার নিবাসী কোটিপতি জালাল উদ্দিনের একমাত্র ছেলে প্রকৌশলী আবদুল কাইয়ুমের স্বপ্ন জাগে বড় হয়ে মাসুদ রানা হয়ে ওঠার। তার এই মাসুদ রানা হওয়ার স্বপ্নের কথা জানতে পেরে প্রতারক আঞ্জু ওই প্রকৌশলীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এ সময় কাইয়ুমের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন আঞ্জু। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আঞ্জু মনে মনে স্বপ্ন আঁকেন, ধনীর দুলাল কাইয়ুমের টাকা আত্মসাৎ করে কোটিপতি হওয়ার।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার আঞ্জুর বরাত দিয়ে আরও জানান, আঞ্জু ২০১৭ সালে কাইয়ুমকে সরকারি উচ্চ পদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসাবে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ২০ লাখ টাকার চুক্তি করেন। সেই কথা মতো ২০১৮ সালে কাইয়ুমের কাছ থেকে নয় লাখ টাকা নিয়ে মালয়েশিয়া চলে যান আঞ্জু এবং ফন্দি আটে কিভাবে এই নয় লাখ টাকা আত্মসাৎ করা যায়।

এদিকে ভুক্তভোগী কাইয়ুম একটি মেয়েকে পছন্দ করতেন যা আঞ্জু আগে থেকেই জানতেন। তবে সম্প্রতি সে মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায়। চলতি বছরের ৯ মার্চ কাইয়ুমের পছন্দের মেয়ে হবু স্বামীসহ ন্যাশনাল পার্কে ঘুরতে আসবেন এই খবরটি কাইয়ুমকে মুঠোফোনের মাধ্যমে জানান আঞ্জু। তার পছন্দের ওই মেয়েকে হবু স্বামীর কাছ থেকে অপহরণ করে কাইয়ুমের হাতে তুলে দেবেন বলে স্বপ্ন দেখান আঞ্জু।সে জন্য কাইয়ুমকে নিয়ে গাজীপুরের ন্যাশনাল পার্কের গভীর জঙ্গলে চলে যান আঞ্জু এবং বিভিন্ন গল্প করে সময় অতিবাহিত করতে থাকেন।

পরে ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কাইয়ুমকে ছবি তোলার কথা বলে ওই পার্কের একটি গাছের সঙ্গে দাঁড় করান আঞ্জু। সেখানেই পরিকল্পিত উপায়ে তাকে পেছন থেকে গলা চেপে ধরে মাটিতে ফেলে হত্যা করেন আঞ্জু। সেই সঙ্গে লাশের মুখে এসিড মেরে পুড়িয়ে দেন যাতে কেউ ওই লাশ সনাক্ত করতে না পারে। পরে ১৩ মার্চ গাজীপুর সদর থানার পুলিশ খবর পেয়ে অর্ধ-গলিত অবস্থায় কাইয়ুমের লাশ উদ্ধার করে। পরে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়।

আঞ্জু আরও জানান, মালয়েশিয়ায় তিনি এক বছর অবস্থান করেন এবং সেখানেই পরিকল্পনা করেন বাংলাদেশে গিয়ে  কাইয়ুমকে গাজীপুরের গভীর জঙ্গলে নিয়ে হত্যা করবেন। এর আগে আঞ্জু নিহত কাইয়ুমকে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বানানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গভীর জঙ্গলে সাত দিন এবং মালয়েশিয়াতে সাত দিনের ট্রেনিংয়ের কথা বলেছিলেন।

মালয়েশিয়া থেকে নিয়মিত ম্যাসেঞ্জারে ও তিনি যোগাযোগ করতেন এবং বিভিন্ন ছবি পাঠিয়ে কাইয়ুমের বিশ্বাস অর্জন করেন। পরবর্তীতে গত ০৪ মার্চ মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসেন আঞ্জু। পরে পরিকল্পনা মোতাবেক আত্মগোপনে থাকেন। কাইয়ুমের সঙ্গে নতুন মোবাইল সিমের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ করেন। তার পরিকল্পনা ছিল কাইয়ুমকে হত্যা করে ফের মালয়েশিয়া চলে যাবেন তিনি।

Comment here