খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরা এখনো অনিশ্চিত - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
রাজনীতি

খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরা এখনো অনিশ্চিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে চান বিএনপির নেতা-কর্মীরা। কিন্তু তাঁদের এই ইচ্ছা শিগগির পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও আইনি জটিলতাসহ পারিপার্শ্বিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁর রাজনীতিতে ফেরাটা অনিশ্চিত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকারও চায় না খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ দিতে। তাঁকে সাময়িক মুক্তি দেওয়ার সময়েই তা নিশ্চিত করা হয়। গত ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সরকার খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয়। যদিও ওই আদেশে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করতে পারবেন কি না, তার উল্লেখ ছিল না। তবে নেপথ্যে এই কারামুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল, এ সময়ে খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। এ ছাড়া তিনি বাসায় থেকে চিকিৎ​সা নেবেন, বিদেশে যেতে পারবেন না। সব শর্তই তিনি মেনে চলছেন।

যদিও বিএনপির নেতারা বলছেন, অসুস্থতার কারণে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠলে সরকার আবার তাঁকে কারাগারে পাঠাতে পারে। সে জন্য গত পাঁচ মাসে এ বিষয়ে খুব সতর্ক ছিলেন দলের নেতারা। ইতিমধ্যে মুক্তির পাঁচ মাস পার হয়ে গেছে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর ছয় মাসের সাজা স্থগিতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর ভাই শামীম ইস্কান্দার গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, পরিবারের আবেদনে বিদেশে যেতে না পারার শর্তটি শিথিল করার অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে তিনি দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎ​সা নিতে পারেন। কারণ, করোনা পরিস্থিতিতে গুলশানের বাসায় খালেদা জিয়ার উপযুক্ত চিকিৎ​সা করা যায়নি। ৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বেশ কয়েক বছর ধরে ডায়াবেটিস, বাত ও চোখের সমস্যাসহ আরও​ কিছু স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন। পরিবার মনে করছে, তাঁর উন্নত চিকিৎ​সা জরুরি।

সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে দ্বিধা আছে। তাঁরা এর রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতি বিচার-বিশ্লেষণ করছেন। তবে খালেদা জিয়া যদি ‘রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড’ থেকে দূরে থাকার বিষয়ে ‘নিশ্চয়তা’ দেন, তাহলে সরকার তা বিবেচনায় নিতেও পারে। যদিও বিদেশে গিয়ে এ নিশ্চয়তা কতটা ঠিক থাকবে, তা নিয়ে সরকারি মহলে সংশয়ও আছে। কারণ, বিদেশে গিয়ে রাজনৈতিক তৎ​পরতা শুরু করলে তা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলের প্রধান শক্তি হচ্ছেন খালেদা জিয়া। তিনি দল ও জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রতীক। কিন্তু দুই বছরের ওপর তাঁর কারাভোগ, তারপর শর্ত সাপেক্ষে সাময়িক মুক্তির পর নীরবতায় বিএনপির রাজনীতির ভবিষ্যৎ​ নিয়ে চিন্তা​য় আছেন নেতা–কর্মীরা। কারণ, যুক্তরাজ্যে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার ও প্রকাশে দেশের গণমাধ্যমের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এখন খালেদা জিয়াও যদি শর্তের বেড়াজালে বন্দী হয়ে রাজনীতি থেকে আরও দীর্ঘ সময় বিরত থাকতে বাধ্য হন, তাহলে দলের ভবিষ্যৎ কী হবে।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতার মূল্যায়ন হচ্ছে, যেকোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার বিরোধী দলের প্রধান নেতাকে দমিয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকে। সে জন্য জনপ্রিয় নেতারা যাতে জনগণের সংযোগে আসতে না পারেন, সরকার সে চেষ্টা করে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে। বিশেষ করে, খালেদা জিয়াকে তখনই সরকার মুক্তির দেওয়ার উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নিয়েছে, যখন করোনা মহামারি চলছিল।

রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি এবং তাঁর মুক্তির বিষয়ে পরিবারের উদ্যোগ ও তৎ​পরতা নিয়েও দলের ভেতরে নানা প্রতিক্রিয়া আছে। কারণ, দলের কেউ জানেন না কোথা থেকে কী হচ্ছে। এ নিয়ে দলের নেতাদেরও কিছু বলার নেই কারণ তাঁরা আইনি পথে বা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে দলীয় প্রধানকে মুক্ত করতে পারেননি। আবার দলে তারেক রহমানের নেতৃত্ব অনেকের মনঃপূত হচ্ছে না বা জ্যেষ্ঠ নেতারা খালেদার নেতৃত্বে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন—দলে এমন কথা চালু আছে। কিন্তু রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তারেক রহমানই দলের মূল নেতা হয়ে উঠেছেন। নেতাদের সবাইকে তা মেনে নিতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, সব বিষয়ে সবাই যে খুশি, তা না। কিন্তু যতই অখুশি হোক, তারেক রহমান দলকে একত্র রাখতে পেরেছেন। সবার ধারণা ছিল, চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে দল ভেঙে যাবে। দল ভাঙেনি, এটাই তাঁর কৃতিত্ব।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত কারাগারে পাঠান। তাঁর বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ছাড়াও আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে, যার বেশির ভাগ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের করা।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার গত ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য দুর্নীতির মামলায় তাঁর কারাভোগের সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয়। এরপর থেকে গুলশানের ভাড়া বাসায় ব্যক্তিগত চিকিৎ​সক ও পরিবারের সদস্যদের দেখভালের ওপর আছেন। এই সময়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্য নেতাদের সঙ্গে খুব একটা সাক্ষাৎ দেননি খালেদা জিয়া। ঈদুল আজহার পরদিন ২ আগস্ট দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি।

দলের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, রাজনীতিতে খালেদার অনুপস্থিতি দলীয় নেতা–কর্মীদের মানসিক শক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং এ কারণেই তাঁকে দলীয় বিষয়ে সক্রিয় থাকতে হবে। তাঁরা বলছেন, চেয়ারপারসন নিজেই রাজনীতিতে সক্রিয় থাকতে চান। কিন্তু শারীরিক অবস্থা এবং পারিপার্শ্বিক সীমাবদ্ধতার কারণে পারছেন না।

অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দৈনিক মুক্ত আওয়াজকে বলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় থাকুন নেতা-কর্মীরা চান। কিন্তু একদিকে তিনি বন্দী, অন্যদিকে তিনি অসুস্থ। মির্জা ফখরুলের দাবি, রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। বরং তাঁর প্রতি ভালোবাসা আরও বাড়ছে।

Comment here