গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন সরকার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন সরকার

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার গণতান্ত্রিক বিশ^ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। বিএনপি মনে করে, ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে গুলিতে হতাহতের ঘটনায় বাংলাদেশ এখন ক্রসফায়ারের মুখে। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল জাতির সঙ্গে সহিংস প্রতারণা। দলটি বলেছে, এই সরকারের আমলে গত পনেরো বছরে ২ হাজার ৭০০ নেতাকর্মীকে হত্যা ও ৭০০ জনকে গুম করা হয়েছে। এই সময়ে ৫০ লাখ নেতাকর্মী নাগরিক জীবন থেকে বঞ্চিত। এই সময়ে যত মেগাপ্রজেক্ট করা হয়েছে তার প্রতিটি পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এই অবস্থা থেকে দেশকে আবারো মুক্ত করবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করে দলটি।

গতকাল বুধবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গত সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যতিক্রমধর্মী এ সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি নেতা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে প্রতিনিয়ত গুলিবর্ষণের মাধ্যমে আমাদের বিজিবি সদস্য ও দেশের জনগণকে হত্যা করা হচ্ছে। আবার পূর্ব দিকে মিয়ানমারের পুলিশ ও সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গোলাগুলিতে এ পর্যন্ত দুজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঝাঁকে ঝাঁকে রাখাইন থেকে আশ্রয় গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ এখন ক্রসফায়ারের মুখে। এটি নিয়ে গণমাধ্যমকেও ভাবতে হবে; অন্তরালে কী আছে। তিনি বলেন, যারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে তার সঙ্গে এই সরকারের (বাংলাদেশ) কোনো গোপন সম্পর্ক আছে কিনা। মিয়ানমার কীভাবে বাংলাদেশে গুলি ছোড়ার সাহস পায় এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আমরা চারদিক থেকে যেভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছি, রক্ষা পাওয়ার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের এক মাস পূর্ণ হওয়ার দিনে এ সংবাদ সম্মেলনে গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেন, গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এই ফ্যাসিস্ট সরকার। তাদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে অবৈধ অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা দিয়ে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সমর্থন আদায় করেছে। এর প্রমাণস্বরূপ ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন যে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় ভারতই আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়িয়েছিল।

লিখিত বক্তব্যে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৭ জানুয়ারি প্রহসনমূলক নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হয়নি। বরং নির্বাচনের নামে এটি ছিল জাতির সঙ্গে একটি সহিংস প্রতারণা। পর পর তিনটি প্রহসনের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে আরও বলা হয়, গত ১৫ বছর ধরে গণবিরোধী সরকার যে দুর্নীতি-দুঃশাসন ও দমন-দুর্বৃত্তায়ন চালিয়েছে, সমাজের প্রতিটি শ্রেণি ও পেশার মানুষ তাতে বৈষম্য, অবিচার ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের জনগণ ব্যথিত, মর্মাহত ও সংক্ষুব্ধ।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ৫ শতাংশের কম ভোটার উপস্থিতি ছিল দাবি করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, স্বাধীনতাকামী জনগণ, বিএনপি এবং ৬২ গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক ও যৌক্তিক ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। পৃথিবীতে বিএনপির মতো নির্যাতিত আর কোনো রাজনৈতিক দল আছে কিনা, সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে ৫০ লাখেরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছে? ২ হাজার ৭শর বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা, প্রায় ৭০০ জন নিরপরাধ মানুষকে গুম এবং দলের মহাসচিবসহ ২৫ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে পরিকল্পিতভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাকশালের মতো করেই শেখ হাসিনা একদলীয় শাসন কায়েম করতে চাচ্ছেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার চালাচ্ছে মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি। বিএনপির দাবি, ৩৬ হাজার কোটি টাকার মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে খরচবহুল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র! পায়রাতে ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার যে সমুদ্রবন্দর হচ্ছে, এটিও এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ খরচবহুল সমুদ্রবন্দর। এছাড়া রূপপুরের বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, বিআরটি প্রকল্পসহ সব বড় প্রকল্পগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ সময় বাজারে আওয়ামী সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিটি দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারের সমালোচনা করেন তিনি।

গয়েশ্বর বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে-বিপক্ষের এই লড়াই, আজ কেবল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির লড়াই নয়। ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন, সামর্থ্য অনুযায়ী ভূমিকা রাখেন, তবে ফ্যাসিবাদের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

Comment here