গৃহবধূকে হত্যার পর ‘উল্লাস’ করতে গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার খুনি! - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

গৃহবধূকে হত্যার পর ‘উল্লাস’ করতে গিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার খুনি!

জনি রায়হান : ফাতেমা আক্তার বাবলী (২৮)। ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিয়ানগরের একটি বসবাস করতেন। বাবলীর স্বামী আব্দুস সামাদ সেদ্ধ ডিম বিক্রি করে সংসার চালাতেন। তাদের একমাত্র ছেলেও স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করত।

সব মিলেয়ে ভালোই চলছিল বাবলী-সামাদের সংসার। কিন্তু গত ২৬ সেপ্টেম্বর জিয়ানগরের সেই বাসাতেই খুন হন ফাতেমা আক্তার বাবলী। ওড়না দিয়ে হাত-পা বাঁধা বাবলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরে এই ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় মো. সেলিম (২৫) নামের এক যুবককে। গৃহবধূ বাবলীকে হত্যার পরে তার ঘরে থাকা আনুমানিক ৩০/৪০ হাজার টাকা নিয়ে বন্ধুদের নিয়ে মৈনট ঘাটে আনন্দ-উল্লাস করতে গিয়েছিলেন হত্যাকারী সেলিম। কিন্তু মৈনট ঘাটে পৌঁছানোর পর তার কাছে থাকা টাকা ছিনতাই করে নেয় স্থানীয় একটি ছিনতাইকারী চক্র। শুধু তাই নয়, সেই ছিনতাইকারী চক্রকে আগে থেকেই খবর দিয়েছিল খুন করে পালিয়ে যাওয়া সেলিমের বন্ধু জয়।

বাবলী হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, মামলার এজাহার এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এই ঘটনার পরে নিহত বাবলীর বাবা মো. বাবুল কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের  করেছেন।

মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছে, বাবলীর স্বামী আব্দুস সামাদ খোলামোড়া গুদাড়াঘাটে প্রতিদিনের মতো ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে সেদ্ধ ডিম বিক্রি করতে যান। সে দিন দিবাগত রাতে তিনি রাত ১টার দিকে ফিরে এসে বাবলীর হাত-পা বাঁধা গলাকাটা লাশ দেখতে পান। বিষয়টি তাৎক্ষণিক স্বজনদের ফোনে জানান। এরপর পুলিশ এসে বাবলীর লাশ উদ্ধার করে।

মামলার এজাহারে তিনি আরও জানান, তার মেয়ের বাসা থেকে আনুমানিক নগদ টাকা, স্বর্ণের চেইন, আংটি, ব্রেসলেটসহ মোবাইল ফোনও হত্যাকারীরা নিয়ে যায়।

পরকীয়ার পর যেভাবে হত্যা

এই ঘটনার পর কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে নেমেই সেলিম নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। পরে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, এই সেলিমের সঙ্গে বাবলীর দীর্ঘদিনের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এর বিভিন্ন প্রমাণ পায় পুলিশ।

পুলিশ জানায়, হত্যার দিন (২৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাবলীর বাসায় যান সেলিম। তখন বাসায় বাবলী একাই ছিল। সেলিমের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় ওই এলাকা থেকে বাসা বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাবলী। এ কারণেই সেলিম বাবলীকে হত্যা করে।

হত্যার পর সেলিম বাবলীর বাসা থেকে আনুমানিক ৩০-৪০ হাজার টাকা নিয়ে তার বন্ধু জয় ও মামুনকে নিয়ে রাতেই মৈনট ঘাটে চলে যায়।

ছিনতাইয়ের শিকার খুনি নিজেই

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মৈনট ঘাটে যাবার পর রাত ১০টার দিকে ছিনতাইয়ের শিকার হন সেলিম। এই ঘটনায় দোহার থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই। অপর দিকে গত ১৯ নভেম্বর বাবলী হত্যা মামলাটিরও তদন্তের  তদন্তের দায়িত্ব পায়  পিবিআই।

পিবিআই জানায়, ছিনতাইয়ের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পিবিআই। সেলিমের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া চক্রটিকে ফোন করে ডেকে এনেছিল তার বন্ধু জয়।

গত ৩ ডিসেম্বর রাতে জিয়ানগর এবং কালিন্দী এলাকায় অভিযান চালিয়ে জয়, আলিফ ও দেলোয়ার নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। উদ্ধার করা হয়েছে ছিনতাই হওয়া মোবাইলফোনও।

বর্তমানে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এসআই সালেহ ইমরানকে। তিনি দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে জানান, মৈনর ঘাটে যাওয়ার সময় জয় জানতেন সেলিমের কাছে টাকা আছে। তাই নিজের পরিচিত একটি ছিনতাইকারী চক্রকে খবর দেয় সে। এ কাজের জন্য  জয় তার পূর্বপরিচিত বন্ধু আলিফকে ডেকে আনেন। আলিফ তার অপর দুই বন্ধু রনি ও সাগরকে সঙ্গে নিয়ে অটোরিকশা নিয়ে মৈনট ঘাটে অপেক্ষা করতে থাকেন।

রাত ১০টার দিকে সেলিম, মামুন ও জয় মৈনট ঘাটে আসলে জয়ের ইশারায় আলিফের নেতৃত্বে ধারালো চাকু দেখিয়ে প্রথমে জয়ের কাছ থেকে মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেন আলিফ। পরে মামুনের কাছ থেকেও মোবাইল ছিনিয়ে নেয় রনি ও সাগর।

তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার সেলিম পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।

আরও এক তরুণী নিখোঁজ

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তার হওয়া সেলিম ২০১৬ সালের দিকে জিয়ানগরের মিনা (১৮) নামে এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরুণীকে বাড়ি থেকে পালিয়ে নিয়ে যায় সেলিম।

কিন্তু আজও ওই তরুণীর খোঁজ পায়নি পরিবার। এই ঘটনায় নিখোঁজ মিনার বাবা ২০১৬ সালের ১১ নভেম্বর কেরানীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগও দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ সেই তরুণী।

 

Comment here