স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ আসা, দেশে পণ্যটির দামের পতন, বন্দরে কনটেইনারের ভাড়া পরিশোধ করাসহ নানা কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ খালাস নিচ্ছেন না আমদানিকারকরা। এই ২৪ হাজার টন পেঁয়াজের দাম কেজি ৫০ টাকা হিসাবে আনুমানিক ১২ কোটি টাকা। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পণ্য আমদানির পর খালাস নেওয়ার নির্ধারিত ৪৫ দিন পার হলে এসব পেঁয়াজ নিলামে তোলা হবে। কিন্তু ততদিনে এসব পেঁয়াজ পুরোপুরি পচে যাবে। পচে যাওয়ার আগে খালাস নিতে আমদানিকারকদের চিঠি দিয়েও ছাড়া পাচ্ছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও মজুদে ঘাটতির কারণে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত অন্যান্য দেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে বাংলাদেশের বাজারে লাগামহীন পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। এমনকি প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৫০ টাকাতেও বিক্রি হয়। পরে সরকার পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্ক হ্রাস করার পর ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেন। এ পরিস্থিতির সামাল দিতে সরকার গত বছরের মতো মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিসর, তুরস্কসহ ১৪টি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৯-এর জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য অনুমতিপত্র (আইপি ইস্যু) নিয়েছে ২ লাখ ৯৩৪ টন। একই সময়ে এসেছে ১ লাখ ১০ হাজার ৯৬ টন। ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের (সমুদ্রবন্দর শাখা) উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. নাছির উদ্দীন আমাদের সময়কে বলেন, অলিখিতভাবে আমরা সমুদ্রবন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আইপি ইস্যু বন্ধ করেছি। এখনো প্রায় ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ খালাস নেননি আমদানিকারকরা। এসব পণ্য বন্দরে বেশি দিন রাখা যায় না। পচন শুরু হলে বিপদ বাড়াবে। এ ছাড়া কৃষকদের কথা চিন্তা করে সরকার ১ জানুয়ারি থেকে নতুন করে পেঁয়াজ আমদানিতে যাচ্ছে না। আপাতত আইপি ইস্যু করা হচ্ছে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকার পর গত শনিবার থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করেছে ভারত। প্রায় ৬৫ টন ভারতীয় পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে আসে। হঠাৎ করে দেশীয় বাজারে এ পেঁয়াজ আসার কারণে বিপাকে পেঁয়াজচাষি ও আমদানিকারকরা।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির সঙ্গে জড়িত দুজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে গতকাল কথা হয়। তবে পেঁয়াজের প্রসঙ্গটি তুলতেই দুজনই মোবাইল সংযোগ কেটে দেন। তারা এ বিষয়ে কথা বলতেই সম্মত হননি।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্র্তমানে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। দেশের কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসছে। অন্যদিকে বন্দরে পড়ে আছে পেঁয়াজ। অবস্থা বেগতিক দেখে সেগুলো ব্যবসায়ীরা খালাস নিচ্ছেন না। এর পরও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। এটা আমাদের কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই দুঃখজনক।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি এবং সংকট তৈরি হওয়ার পর গত কয়েক মাসে বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে আরও প্রায় ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ। প্রায় এক মাস ধরে এসব পেঁয়াজ বন্দরে পড়ে থাকলেও আমদানিকারকরা সেগুলো খালাস নিচ্ছেন না। পেঁয়াজের চালান খালাস নিতে আমদানিকারকদের দাপ্তরিক চিঠি দিয়েও সাড়া মিলছে না।
Comment here