চার দেশের করোনা ভ্যাকসিনের আগাম অর্ডার! - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

চার দেশের করোনা ভ্যাকসিনের আগাম অর্ডার!

আজহারুল ইসলাম অভি : করোনা ভাইরাসের টিকার ৪০ কোটি ডোজ প্রি-অর্ডার করতে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে উপনীত হয়েছে ইউরোপের চার দেশ। দেশগুলো হচ্ছে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস।

যুক্তরাজ্যের খ্যাতনামা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত এ টিকা বাজারজাত করতে কাজ করে যাচ্ছে ব্রিটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আস্ট্রাজেনেকা। এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গেই চুক্তিতে উপনীত হয়েছে চার দেশের জোট ইনক্লুসিভ ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (আইভিএ)। শনিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডিডব্লিউ। চুক্তি অনুযায়ী, এ টিকা ইউরোপে সরবরাহের কাজে সহায়তা দেবে জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও নেদারল্যান্ডস।

জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আস্ট্রাজেনেকার সম্ভাবনাময় এ টিকা বর্তমানে পরীক্ষামূলক ধাপে রয়েছে। এর আগে করোনা মহামারীর এই সময়ে কোনো ধরনের মুনাফা ছাড়াই অক্সফোর্ডের এ টিকা সরবরাহের অঙ্গীকার করে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। জার্মান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সবকটি দেশ এই টিকা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। টিকার ডোজ প্রস্তুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যা অনুযায়ী দেশগুলোতে এটি বিতরণ করা হবে। আশা করা হচ্ছে, ২০২০ সালের শেষ নাগাদ টিকাটির উন্নয়নকাজ বা বাজারজাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।

জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্প্যান বলেন, ‘বিশ্বের অনেক দেশ ইতোমধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফেলেছে। তবে ইউরোপ তা করেনি। এ সমস্যা মোকাবিলায় কয়েকটি সদস্য দেশের গ্রুপ একত্রে ব্যবস্থা নিলে বাড়তি গুরুত্ব পাবে। কমিশনের সঙ্গে একত্রে আমরা আরও দ্রুত ও শক্তিশালী হয়ে ভবিষ্যতে দরকষাকষি চালাতে পারব।’ চুক্তির বিষয়ে ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফেসবুকে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইউরোপের মানুষের জন্য ৪০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপের জনসংখ্যা ৪৪ কোটি ৭০ লাখের মতো। ৪০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন পেতে কত খরচ হচ্ছে, সে বিষয় অবশ্য সামনে আনা হয়নি। জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইউরোপের চারটি দেশ মিলে একটি জোট তৈরি করেছে। তারা অন্য ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির সঙ্গেও সম্ভাব্য ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা করছে। গত শুক্রবার ইউরোপিয়ান কমিশন আগাম ভ্যাকসিন কেনার চুক্তির পক্ষে সায় দেয়।

করোনা ভাইরাস নিয়ে কাজ চালানো বিশ্বের ল্যাবরেটরিগুলো দ্রুত ভ্যাকসিন খুঁজে পেতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ১২ থেকে ১৮ মাস সময়সীমার মধ্যে ভ্যাকসিন আনতে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক বিনিয়োগে সাহায্য করবে আগাম অর্থ পরিশোধের চুক্তিগুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি ভ্যাকসিনটি বিশ্বে যে কয়েকটি ভ্যাকসিন অগ্রগামী অবস্থায় আছে, তার মধ্যে অন্যতম।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী প্যাসকল সারিওট বলেন, ‘ইউরোপের লাখো মানুষকে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের অনুমোদন পাওয়ার পর তা সরবরাহ করার নিশ্চয়তা দেবে এ চুক্তি। ইউরোপের সাপ্লাই চেন দ্রুত উৎপাদন শুরু করবে এবং দ্রুত তা পাওয়ার ব্যবস্থা করবে।’ অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস, জিএভিআই ও ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ৭০ কোটি ডোজের জন্য চুক্তি করেছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে আলাদা ১০০ কোটি ডোজ তৈরির জন্যও চুক্তি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী এক হাজার সুস্থ মানুষের ওপর ভ্যাকসিনটি পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। এর পরের ধাপে গত মাসে ১০ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিনটি দেওয়া হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ছাড়াও মডার্না ও সানোফি নতুন করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে দেওয়া লকডাউন তুলে নিতে দ্রুত ভ্যাকসিন আনার বিষয়টি এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে ৪ লাখ ১৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে এবং ৭৫ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।

Comment here