চীনের অর্থায়ন করা প্রকল্পের অর্থ আনতে সরকার তার পছন্দের ব্যক্তিদের কমিশন দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার বিকেলে মানিকগঞ্জে ঢাকা বিভাগ বিএনপির উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতির নতুন নতুন উপায় খুঁজছেন। মেগা প্রজেক্ট দিয়ে মেগা দুর্নীতির ব্যবস্থা করছে। এ যে প্রজেক্টগুলো আসে; বেশিরভাগই চীন থেকে অর্থায়ন করা হয়; তা বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া হয়। আবার বাংলাদেশ সরকার তার পছন্দসই লোকদের কাজ করার জন্য টেন্ডার দেয় কোটি বিলিয়নস অব ডলার। সেখান থেকে সরকারের মদদপুষ্ট এক-দুইজন লোক ফাইভ পার্সেন্ট কমিশন পায়- ওই অর্থটা আনার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘কাজ বণ্টনের সময় আবার ফাইভ পার্সেন্ট নেয়। চীন থেকে যে টাকা আনছে, সেখানেও কমিশন বা ভাগ বসাচ্ছে। কমিশন ছাড়া কোনো কাজ করে না। নগদের প্রতি ট্রানজেকশনে প্রতি টাকায় পাঁচ পয়সা কমিশন পায়, সেই কমিশন কে পায়? সেই কমিশন দেশের বাইরে বিশেষ ব্যক্তির কাছে চলে যায়।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তখন শেখ মুজিবুর রহমান সরকার, অর্থনীতি সমিতির একটা সভা হচ্ছিল- ওই সভায় সমিতির সভাপতি ড. মুজাহারুল হক পাশে বসিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে বলেছিলেন, ‘‘মাননীয় রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের অর্থনীতি অতি তীব্র গতিতে রসাতলে যাচ্ছে।’’ আজকে আবার সেই সময় উপস্থিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি পুরো রসাতলে যাচ্ছে। সোমবার একটা ফোরামে নোয়াব (সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন) একটা সেমিনারে দেশের সবচেয়ে স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদরা বলেছেন যে, অর্থনীতি একটা বিপর্যয়ের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ সরকার স্বীকার করতে চায় না। কারণ, তাদের দুর্নীতি তো চলছেই।’
তিনি বলেন, ‘রাজপথে এক বছরে ২২ জন তরুণ প্রাণ দিয়েছে। এই সরকার আমাদের ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে;দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে।’
তরুণ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের আর চুপ করে বসে থাকলে চলবে না। আপনারা জেগে উঠুন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবং ১৯৭৫ সালে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তিনি দেশকে রক্ষা করেছেন। এরপর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন; তাদের মতো করে এখন আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে সবাইকে জেগে উঠতে হবে। পরাজিত করতে হবে ভয়ঙ্কর এই দানবকে; যারা আমাদের সব কিছু তছনছ করে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ শুধুমাত্র আধিপত্যবাদ শুধু নয়; একটি ফ্যাসিবাদের কবলে পড়েছে। এদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। এ কারণে তারা নির্বাচনকে বাদ দিয়ে নিজেদের মতো নিজেদের মতো নির্বাচন করছে। যে নির্বাচন গত ৭ জানুয়ারি দেশের মানুষ বর্জন করেছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখনো স্লোগান দেওয়া হয়, ‘‘সারা বাংলার ধানের শীষে, জিয়া তুমি আছো মিশে’’। দেশের মানুষ কেন এখনো জিয়াউর রহমানকে ভুলতে পারে না। এ দেশের মানুষের যে চিন্তা, সেই চিন্তা নিয়ে তিনি রাজনীতি শুরু করেছিলেন। আমাদের যে জাতিসত্ত্বা বাংলাদেশি- এটা তার দেওয়া।’ জিয়াউর রহমানের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনীর ওপর ছোট বই প্রকাশ ও তৃণমূল পর্যায়ে সেমিনার করে জিয়ার আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শও দেন বিএনপি মহাসচিব।
আলোচনা সভায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘আমেরিকা, চীন ও ভারত- এই তিন পরাশক্তির প্রতিযোগীর মধ্যে বাংলাদেশ পড়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য যে খেলা খেলছে, এই আওয়ামী লীগকে আমরা ক্ষমা করতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সুকৌশলে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তারা একটি ভয়ের সমাজ তৈরি করেছে।’
‘গণতন্ত্র উত্তরণ, মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও খাল খনন কর্মসূচি: জিয়াউর রহমানের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আলোচকদের আলোচনা শোনেন।
বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের সভাপতিত্বে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো ও কাজী সায়েদুল আলম বাবুলের পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, আফরোজা খানম রিতা, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ। এতে অংশ নেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গাজীপুর জেলা বিএনপির ফজলুল হক মিলন, ঢাকা জেলা বিএনপির খন্দকার আবু আশফাক, অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের নেতারা।
এর আগে আজ দুপুরে শহরে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারে বই মেলার উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব। সেখানে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম ও আফরোজা খানম রিতা, জেলার সাধারণ সম্পাদক এস এ কবির জিন্নাহসহ মানিকগঞ্জের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
Comment here