ছাত্রলীগের অনুমতি ছাড়া ‘রিডিং রুমে’ পড়লে ‘গেস্টরুমে’ মারধর - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

ছাত্রলীগের অনুমতি ছাড়া ‘রিডিং রুমে’ পড়লে ‘গেস্টরুমে’ মারধর

মেহেদী হাসান,বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক : ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাকর্মীদের নির্দেশনা ছাড়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করতে ‘রিডিং রুমে’ যেতে পারবে না। গেলে তাদেরকে গেস্টরুমে নিয়ে মারধর করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এ এফ রহমান হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের।

গেস্টরুমে তাদেরকে রিডিং রুমে যেতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। যারা সবাই কমিটির শীর্ষ পদপ্রত্যাশী ও হলের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান রনির অনুসারী। অন্যদিকে, রনি ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের অনুসারী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রনির অনুসারী দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে তিনদিন গেস্টরুমে নেন। এ সময় তাদেরকে ক্যাম্পাসে কীভাবে চলবে সে বিষয়ে বিভিন্ন ‘ম্যানার’ শেখান। গেস্টরুমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা যাতে হলের ক্যান্টিনে না খায়, সে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমনকি তাদেরকে ‘রিডিং রুমে’ও যেতে নিষেধ করা হয়। গেলে পরবর্তী গেস্টরুমে তাদেরকে মারধর করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গেস্টরুমে যখন রিডিং রুমে যাওয়ার জন্য নিষেধ করা হয় তখন পাশ থেকে আমার এক বন্ধু সিনিয়রদের কাছে জানতে চায় “গণরুমে পড়া যায় না, তাহলে কোথায় গিয়ে পড়ব?” জবাবে সিনিয়ররা বলেন, “প্রথম বর্ষে কোনো পড়াশুনা নেই। ঘুরবি, বেড়াবি এবং রাজনীতি করবি।”’

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘আমরা এক রুমে ৩০ থেকে ৪০ জনের মতো ছাত্র থাকি। সেখানে পড়ার কোনো পরিবেশ নেই। কিন্তু রিডিং রুমে গিয়ে পড়লে সেখানেও যাওয়া নিষেধ করে দিয়েছে। এমনকি হলের ক্যান্টিনে না খেতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

স্যার এফ রহমান হলের আরেক শিক্ষার্থী দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘গেস্টরুম শেষ হলে তাদেরকে জোর করে রাতে ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারা পড়াশুনো করতে চাইলেও করতে দেওয়া হয় না।’

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের আরিফ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অয়ন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের হাসান, সমাজ কল্যাণ বিভাগের পলাশ, পালি ও বুদ্ধিষ্ট স্টাডিজ বিভাগের মাহবুব, সমাজ কল্যাণ বিভাগের জাবেদ, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের তানভীর, পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের আকির। তারা সবাই দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

তবে অভিযুক্ত এসব শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের কাছ থেকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের কোনো নির্দেশনা আসে না। তাদের সিনিয়ররা যা নির্দেশনা দেয় তা তারা বাস্তবায়ন করে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মিজানুর রহমান রনি দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘তাদেরকে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’’

প্রথম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, সনজিত চন্দ্র দাসের এসব অনুসারীরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে বিভিন্ন বিষয়ে চাপ দেয়। রাজনৈতিক প্রোগ্রাম থাকলে তাদেরকে ক্লাসে যেতে দেওয়া হয় না। বিভিন্ন বিষয়ে নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখায়। রাতে তাদেরকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ সময় নির্দেশা দেওয়া হয় রাত একটা বা দুইটার আগে হলে না ঢুকতে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা বিষয়টি দেখবো। এরকম হয়ে থাকলে আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘হলে কোনো শিক্ষার্থী কি করবে সে বিষয়ে ছাত্রলীগ নিদের্শনা দেওয়ার কে? যদি কেউ অভিযোগ করে তবে আমরা অভিযুক্তদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

Comment here