ছেলের চেয়ারে বসবেন মা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

ছেলের চেয়ারে বসবেন মা

চক্রান্ত হোক অথবা ভুলের কারণে, ছেলে বেকায়দায় পড়েছে। তাই বৃদ্ধ বয়সে মায়ের আচল দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখার যুদ্ধে নামেন গাজীপুরের জায়েদা খাতুন। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত গাজীপুরের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের মা। একের পর এক বাধা আর নানান প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে অবশেষে শেষ হাসি হাসলেন তিনি। বিপদে পড়া সন্তানের স্বপ্নকে নিজের মধ্যে লালন করে জয় ছিনিয়ে নিলেন এই নারী।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়তনের সিটি কর্পোরেশন গাজীপুরের তৃতীয় নির্বাচনে প্রথম নারী মেয়র ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় নারী মেয়র হলেন ‘মা’ জায়েদা খাতুন।

ছেলে সাবেক মেয়র, বেকায়দায় পড়ে চেয়ার হারান তিনি। দল, কর্মী, স্বজন সবাই দূরে সরে গেলেও পাশে ছিলেন মা। ছেলের দীর্ঘ সংগ্রামে পাশে থেকে মা জায়েদা খাতুন শক্তি যুগিয়েছেন।

নির্বাচনের পূর্বে ছেলে জাহাঙ্গীর প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার ছেলে নগরে বাসিন্দাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছিল। নগরের রাস্তাঘাটের অনেক উন্নয়ন করছে। কিন্তু কিছু মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে, ষড়যন্ত্র করে আমার ছেলেকে বসানো হইছে। আমার ছেলের বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়েছে। আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছি। নগরের ৫৭টা ওয়ার্ডের মানুষ আমাকে কতটা ভালোবাসে, তা আমি ভোটের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাই। আমি ছেলের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।’

advertisement…

আরও পড়ুন: জাহাঙ্গীরের পর তার মায়ের কাছেও হারলেন আজমত

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লা খানকে। এরপর ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন জাহাঙ্গীর আলম। সঙ্গে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্রও জমা দেন তিনি। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে ঋণখেলাপি হওয়ায় জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। তবে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়।

এর পরের লড়াই সম্পর্কে সকলেরই জানা।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল এসেছে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ‘মা’ জায়েদা খাতুন। এর মধ্য দিয়ে তৃতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম নারী মেয়র পেলো গাজীপুর। এবার ছেলের চেয়ারে বসবেন মা।

টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন দুই লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে আজমত উল্লাকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জায়েদা খাতুন।

নিজের জয়ের খবর পেয়ে জায়েদা খাতুন বলেন, ‘আমার এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছিল মিথ্যা, ষড়যন্ত্র ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ। আমি আমার গাজীপুরবাসীর নিকট ন্যায় বিচার পেয়েছি। আমার ছেলের বিরুদ্ধে যে অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচার করা হয়েছে গাজীপুরের সাধারণ মানুষ ব্যালটের মাধ্যমে তার জবাব দিয়েছে। আমি গাজীপুরের সব শ্রেণি-পেশা ও সর্বস্তরের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে আগামীর পথ চলতে চাই।’

শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে মহানগরের ছয়দানায় তার নিজ বাসায় সন্তানের মুখে বিজয়ের কথা শুনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জায়েদা খাতুন এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘আজকের এ বিজয় আমি গাজীপুরবাসীকে উৎসর্গ করলাম। আমার সঙ্গে ছিল সাধারণ মানুষ এবং সাংবাদিকরা। আমি গাজীপুরবাসী এবং সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার ছেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তার পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা নিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে চাই। আমার নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গাজীপুরকে একটি আধুনিক, সবুজ ও সুন্দর বাসযোগ্য নগরী গড়তে কাজ করব। এরজন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই।’

এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে জেলা পরিষদ ভবনের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে জয়ী ঘোষণা করেন সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। এর আগে ফল ঘোষণার শুরু থেকে কেন্দ্রে অবস্থান করেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তবে কেন্দ্রে আসেননি নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ৫৯টি ওয়ার্ডের ৪৮০ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। কোনও ধরনের সংঘর্ষ ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে বিকাল ৪টায় শেষ হয় ভোট।

২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন সিটির প্রথম মেয়র হন বিএনপির এম. এ. মান্নান। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হন জাহাঙ্গীর আলম। তবে মেয়াদ শেষের আগেই তিনি বরখাস্ত হন।

Comment here