বরগুনায় সড়কে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি নয়ন বন্ড আজ মঙ্গলবার ভোররাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। ‘০০৭’ গ্রুপের প্রধান ছিলেন তিনিই। তাই তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বরগুনাসহ আশেপাশের এলাকার মানুষের মনে স্বস্তি বিরাজ করছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা রকমের অনুভূতিও প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
তসলিমা হাসান তমা নামে একজন লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল হাতে নিয়ে এমন একটা নিউজ পেলাম সত্যি অনেক অনেক ভালো ভালো লাগতেছে। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লার দরবারে লক্ষ কোটিবার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।’
এম কামাল হোছাইন নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘রিফাত হত্যাকারী নয়ন বন্ড ক্রসফায়ার হওয়ায় জনমনে স্বস্তি। আলহামদুলিল্লাহ।’
‘ধন্যবাদ প্রশাসনকে। এই রকম ভাবে প্রত্যেকটা নরপশুদের অপরাধের শাস্তি প্রকাশ্যে কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি। ভেঙে দেওয়া হউক অপরাধীদের বিষদাঁত। আর যেন কেউ অপরাধ না করার সাহস পায়,’ লিখেছেন রিমন ভুইয়ান নামে আরেকজন।
জাহাঙ্গীর কবির মৃধা নামে একজন লিখেছেন, “এখন সময়ের দাবি- ‘নয়ন বন্ড তৈরির কারখানার কারিগরদের মুখোশ উন্মাচিত করা হোক!’”
‘ধন্যবাদ পুলিশ সুপারকে নয়ন বন্ডকে গুলি করে মারার জন্য। খুনির কোনো দল নাই, লিখেছেন মো. শফিকুল ইসলাম রিপন নামে আরেকজন।
আজ বরগুনা শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে পায়রা নদীর তীরে পুরাঘাটা নামক স্থানে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন নয়ন বন্ড। রিফাতকে হত্যা ছাড়াও আগে থেকেই তার বিরুদ্ধে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইনসহ দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেওয়ার অভিযোগ ছিল। জানা গেছে, প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকায় এতদিন তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ ছিল এলাকার মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় জানান, নানা ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে নয়নকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে গ্রেপ্তারের পরপরই তাকে মুক্ত করে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা।
তাদের দাবি, প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় নয়ন বন্ড তৈরি করেন ‘০০৭’ বাহিনী। ওই বাহিনীর মিশনে ঝরেছে একাধিক মানুষের রক্ত, ছিনতাই হয়েছে কলেজ ক্যাম্পাসের আবাসিক-অনাবাসিক ছাত্রদের মোবাইল, ল্যাপটপ, মানিব্যাগ। এ ছাড়া ঘটেছে একাধিক ব্যক্তিকে নারী দিয়ে ফাঁসানোর মতো ঘটনা।
সর্বশেষ ২৬ জুন সকালে বরগুনা শহরের কলেজ রোড এলাকায় প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করেন এই ‘০০৭’ বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনার পরদিন সকালে রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় মামলা করেন।
ওই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড। পুলিশের তথ্য মতে, নিহত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার নয়জন আসামি গ্রেপ্তার রয়েছেন।
এ ব্যাপারে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, নয়ন বন্ডের সঙ্গে থেকে যারা রিফাত শরীফকে নির্মমভাবে হত্যা করে বরগুনা জেলাকে কলঙ্কিত করেছে, তাদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে বরগুনা জেলাকে কলঙ্ক মুক্ত করতে হবে।
Comment here