জুনেই চালুর জন্য প্রস্তুত পদ্মা সেতু - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

জুনেই চালুর জন্য প্রস্তুত পদ্মা সেতু

নিজস্ব প্রতিবেদক : পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এখন চাইলেই এ সেতুতে গাড়ি চালানো সম্ভব। গত শুক্রবার পদ্মা সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের (কার্পেটিং) কাজ শেষ হয়েছে। এখন বাকি কেবল সেতুতে রেলিং ও রোড মার্কিং। জানা গেছে, আগামী জুনের শেষ সপ্তাহে উদ্বোধন করা হতে পারে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। এ জন্য এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছে সেতু বিভাগ। এ ছাড়া সেতুর খসড়া টোলহার নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগ এতে সম্মতিও দিয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য গত বৃহস্পতিবার খসড়া টোলের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছে সেতু বিভাগ। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মূল সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ গত শুক্রবার শেষ হয়েছে। সেতুর ভায়াডাক্ট অংশে কার্পেটিং কাজ বাকি রয়েছে। আশা করছি, আগামী জুনের মধ্যে সেতুর সব কাজ শেষ হবে। তবে সেতু কবে উদ্বোধন করা হবে, তা সরকারের সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী যখন বলবেন, তখন থেকে চালু করা হবে সেতু।

সম্প্রতি সংসদে এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বছরের শেষনাগাদ পদ্মা সেতু চালু হবে। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেতুর কিছু মালামাল আমদানি আটকে রয়েছে। তবে প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, যুদ্ধের কারণে কোনো মালামাল আমদানি আটকে নেই। শুধু সেতুর অ্যালুমিনিয়াম গার্ড রেল ওভার প্যারাপিট (রেলিং) দেশে আসা বাকি রয়েছে। মাসখানেক বিলম্ব হলেও ৭৫ শতাংশ রেলিং নিয়ে জাহাজ গত ২৬ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা করেছে। ৯ মে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে। এরপর ওই মাসেই তা সেতুতে স্থাপনের কাজ শেষ হবে। বাকি ২৫ শতাংশ রেলিং ২২ এপ্রিল কার্গো বিমানে বাংলাদেশে এসেছে। সেগুলো এরই মধ্যে লাগানো হয়েছে সেতুর ভায়াডাক্ট অংশে। এ ছাড়া সেতুতে ল্যাম্পপোস্ট স্থাপন শেষে বাতি লাগানো হয়েছে। এখন চলছে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার কাজ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর দুই পাশে ১২ দশমিক ৩ কিলোমিটার রেলিং স্থাপন করা হবে তিন ফুট উঁচু দেয়ালের ওপর। সেতুর দুই প্রান্তে ৩ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্টে বসবে আরও ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটার রেলিং।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যে প্রস্তাবিত টোলহার পাঠানো হয়েছে, তাতে দেখ গেছে এ সেতু পার হতে যানবাহনকে ফেরির ভাড়ার দেড় গুণ টাকা গুনতে হবে। এর মধ্যে পণ্যবাহী যান চলাচলে ছোট ট্রাকে (পাঁচ টনের কম) টোল এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (পাঁচ থেকে আট টন) দুই হাজার ১০০ টাকা এবং বড় ট্রাকে (আট টনের বেশি) টোল দিতে হবে দুই হাজার ৮০০ টাকা। তিন এক্সেলের কাভার্ডভ্যানে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা এবং চার এক্সেলের ট্রেইলারে ছয় হাজার টোল দিতে হবে। বাড়তি প্রতি এক্সেলের জন্য দেড় হাজার টাকা করে দিতে হবে অতিরিক্ত টোল। বর্তমানে ফেরিতে মোটরসাইকেল পারাপারে ৭০ টাকা দিতে হয়। পদ্মা সেতুতে টোল দিতে হবে ১০০ টাকা। এ ছাড়া প্রাইভেটকারে ৭৫০ টাকা, এসইউভি, জিপ ও পিকআপে এক হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে এক হাজার ৩০০ টাকা, ছোট বাসে এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে দুই হাজার টাকা এবং বড় বাসে দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। ৪২টি পিয়ারে (খুঁটি) ৪১টি স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বরে পদ্মার দুই তীর যুক্ত হয়েছে সেতুতে। সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকায়। দ্বিতল পদ্মা সেতুর লোয়ার ডেক বা নিচতলায় চলবে ট্রেন। লোয়ার ডেকে রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হবে আগামী জুলাইয়ে। ১১ হাজার কোটি টাকায় পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

 

Comment here